দীর্ঘ ক্ষণ প্রস্রাব চেপে রাখছেন!

দীর্ঘ ক্ষণ প্রস্রাব চেপে রাখছেন! জানেন কি এর কুফল ?

পাচমিশালী লাইফস্টাইল
নিয়মিত প্রস্রাব শারীরিক সুস্থতার ইঙ্গিত প্রদান করে। বিপাকীয় ক্রিয়ার মাধ্যমে আমাদের শরীরে যে বর্জ্য সৃষ্টি হয় তার মধ্যে প্রস্রাব অন্যতম। প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে তরল উপায়ে নানা ধরনের ক্ষতিকর বর্জ্য বের হয়। তবে আমাদের অনেকেরই একটা বদ অভ্যাস রয়েছে প্রস্রাব চেপে রাখার। দীর্ঘক্ষণ এই প্রস্রাব চেপে রাখার অভ্যাসটা কিন্তু মোটেই ভাল নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রস্রাব চেপে রাখার এই বদ অভ্যাস অনেক জটিল সমস্যার কারণ হতে পারে।

 

প্রস্রাব কতোক্ষণ আটকে বা চেপে রাখা যাবে

প্রস্রাবের বেগ পাওয়ার সাথে সাথে সবার মূত্র বিসর্জন তথা প্রস্রাব করে ফেলা উচিৎ। আমাদের পানি পান করা পর শরীরের প্রয়োজন ব্যাতিত অতিরিক্ত পানি কিডনিতে গিয়ে জমা হয়। তারপর শরীরের অন্যান্য তরল বর্জ্য বা উপাদানের সাথে মিলে কিডনি থেকে বের হয়ে ব্লাডার বা মূত্রাশয়ে যায়। সেখানেই জমে মূত্র। আমাদের মূত্রাশয় বা ইউরানি ব্লাডার একবারে ৪০০-৫০০ মিলিমিটার মূত্র ধারণ করতে পারে। হিসেব করলে যা মোটামুটি দুই কাপ এর সম পরিমাণ। এর বেশি হলেই মূত্রাশয়ের উপর চাপ পড়ে। এভাবে মূত্রাশয় যখন মূত্রতে পূর্ণ হয় তখন সাথে সাথে আমাদের মস্তিষ্কে সংকেত যায় যে প্রস্রাব পেয়েছে। আর সে সংকেত পাওয়ার পরই আমাদের উচিত দ্রুত মূত্রত্যাগ করা।

 

এমনিতে ১০-১৫ মিনিট প্রস্রাব চেপে রাখলে তেমন সমস্যা হয় না। তবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রস্রাব চেপে রাখলে পরবর্তীতে দেখা দিতে পারে নানা সমস্যা। এর ফলে মূত্রাশয় বা ব্লাডারের উপর মারাত্মক চাপ পড়ে। দীর্ঘদিন এই বদ অভ্যাসের ফলাফলে দেখা দিতে পারে নানান অসুখ।

দীর্ঘ ক্ষণ প্রস্রাব চেপে রাখার কুফল ও ক্ষতিসমূহ

১. প্রস্রাব চেপে রাখলে অনেক জীবাণু, বিশেষ করে কিছু ব্যাক্টেরিয়া মূত্রাশয়ে বেশিক্ষণ থাকার সুবিধা পায়। তখন এই ব্যাক্টেরিয়ার দ্রুত বংশবৃদ্ধি বিস্তার করে ডেকে আনতে পারে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ। এতে নানা উপসর্গ দেখা দেয়। ফলাফলে প্রস্রাবে সময় জ্বালা-পোড়া, প্রস্রাবের রং বদলে যাওয়া, তলপেটে ব্যথা, দূর্গন্ধযুক্ত মূত্র, ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (ইউটিআিই), ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
২. মূত্রের মাধ্যমে আমাদের দেহ থেকে কিডনি হয়ে নানা তরল বর্জ্য পদার্থ বের হয়। দীর্ঘ ক্ষণ প্রস্রাব চেপে রাখলে এই বর্জ্য দেহের ভেতর তথা কিডনিতে জমতে শুরু করে। ফলে কিডনির ভিতরে এই জমাটবদ্ধ বর্জ্য একসময় পাথরে পরিণত হয়। আর কিডনিতে পাথর জমলে তা থেকে ব্যথা, সংক্রমণ, এমনকি রক্তপাতের মতো জটিল সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
৩. আমাদের মূত্রাশয় অনেকটা বেলুনের মতো। সাধারণত এটি যখন পূর্ণ থাকে তখন প্রসারিত হয় এবং মূত্রত্যাগ করলে আবার তা সঙ্কুচিত হয়। কিন্তু ক্রমাগত দীর্ঘ ক্ষণ প্রস্রাব আটকে রাখলে মূত্রাশয় আকারে বড় হয়ে গিয়ে দুর্বল হয়ে যেতে পারে। এতে ঘন ঘন মূত্রত্যাগের প্রবণতাও বাড়তে পারে।
৪. দীর্ঘ ক্ষণ প্রস্রাব আটকে রাখলে পেলভিক পেশির উপর চাপ পড়ে। এভাবে একটা সময় মূত্রাশয় তার নিজের ক্ষমতা হারাতে থাকে। ফলশ্রুতিতে ভবিষ্যতে প্রস্রাব ধরে রাখার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। তখন হাঁচি, কাশির সময়ে অজান্তেই কিছুটা প্রস্রাব বেরিয়ে বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে।
৫. প্রস্রাব ধরে রাখলে তলপেটে প্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে। এছাড়া বিষয়টা অতিরিক্ত হলে মূত্রাশয় ফেটে যাওয়ার আশঙ্কাও থাকে।
আমাদের শরীর ও কিডনি ভাল রাখতে যেমন পর্যাপ্ত পানি পান করা প্রয়োজন রয়েছে,তেমনই সময় মতো মূত্রত্যাগ করাটাও জরুরী। তাই যাদের এ ধরণের দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব চেপে রাখার বদ অভ্যাস রয়েছে তাদের এখনই তা বদলে ফেলা দরকার।

Sharing is caring!

Nusrat Tarannum Mouni

নুসরাত তারান্নুম মৌনী বি‌ভিন্ন ব্লগ ও লিটলম্যা‌গে লেখা‌লে‌খির সা‌থে সম্পৃক্ত। পেশাগত জীবনে গ্রামীণ ফোন সহ বিভিন্ন সুনামধন্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। পাবলিক রিলেশন এক্সপার্ট। বাঙালী ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। খাদ্য, পুষ্ঠি ও ডায়েট নিয়ে পড়াশুনার পাশাপাশি এ নিয়ে নিয়মিত প্রবন্ধ লিখেন।

1 thought on “দীর্ঘ ক্ষণ প্রস্রাব চেপে রাখছেন! জানেন কি এর কুফল ?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *