কোলেস্টেরল বাড়ার কারণ

কোলেস্টেরল বাড়ার ৮টি প্রধান কারণ

নির্বাচিত পোস্ট লাইফস্টাইল
কোলেস্টেরল বাড়ার কারণ অনেক। আমাদের অনেকের ভুল ধারণা এই যে, কোলেস্টরল মানেই ক্ষতিকর। অথচ আমদের দেহের বিভিন্ন প্রাত্যহিক জৈবিক কার্যপ্রণালির জন্য উপযুক্ত পরিমাণে কোলেস্টরল জরুরি।
 কিন্তু  কোলেস্টেরল জিনিসটা আসলে কি ?
কোলেস্টরল হচ্ছে লিভার থেকে নির্গত এক ধরনের চর্বিযুক্ত মোমের মতো ঝিল্লি জাতীয় তরল পদার্থ। এটি পানিতে দ্রবণীয় নয়। কোলেস্টরল সাধারণত চর্বি (যা Lipid নামে পরিচিত) এবং প্রোটিনের সঙ্গে জুড়ে থাকে যাকে একসঙ্গে লিপোপ্রোটিন বলে। 
রক্তের মধ্যে প্রোটিনের (Lipoprotein) সঙ্গে কোলেস্টরল চলাচল করে। ভাল কোলেস্টরল (High Density Lipoprotein- HDL) হার্টের সুরক্ষায় কাজ করে, যেখানে অতিরিক্ত খারাপ কোলেস্টরল (Low Density Lipoprotein- LDL এবং Very Low Density Lipoprotein– VLDL) হৃদরোগের আশঙ্কা বাড়ায়। শরীরের খারাপ কোলেস্টরল অতিরিক্ত থাকলে বুকে ব্যাথা বা Angina, হৃদরোগের আক্রমণ, স্ট্রোক এবং বহুমূত্র বা ডায়াবেটিকস রোগ হতে পারে।

কোলেস্টরল যখন ক্ষতির কারণ

রক্তে যখন উচ্চ মাত্রার খারাপ কোলেস্টরল (HDL) এর পরিমাণ বেড়ে যায় তখন তা রক্তনালিতে জমাট বাঁধে ও রক্তনালি সংকুচিত করতে থাকে । রক্তনালির একটি নির্দিষ্ট ব্যাস বা Diameter রয়েছে। যখন খারাপ কোলেস্টরল রক্তনালিতে জমা হতে থাকে তখন রক্তনালির এই ব্যাস ক্রমশ: সংকুচিত হয়ে যায় এবং রক্তনালি ব্লক হওয়ার ঝুঁকি অনেকখানি বেড়ে যায়। আমরা জানি রক্তনালির মধ্য দিয়ে রক্ত চলাচল করে। আর এই রক্তের মাধ্যমে দেহ আমাদের টিস্যুতে অক্সিজেন ও খাবার পরিবহন করে। রক্তনালিতে কোলেস্টরল জমাট বাঁধলে স্বাভাবিকভাবে যে পরিমাণ রক্ত সঞ্চালিত হবার কথা, সে পরিমাণ রক্ত চলাচল করতে পারে না। এভাবে হার্টের রক্তনালিতে কোলেস্টেরল জমা হলে হার্টের ব্লক হয়ে যায় এবং হার্ট এ্যাটাকের কারণ হয়। তদ্রুপভাবে মস্তিষ্কের রক্তনালি ব্লক হলে স্ট্রোক এর মতো ঘটনা ঘটতে পার।

কোলেস্টেরল বাড়ার কারণ সমূহ

আজকাল অনেকেই কোলেস্টেরলের সমস্যায় ভুগে থাকেন। বেশি বয়সে তো বটেই অনেক কম বয়সেও কোলেস্টেরলের সমস্যা দেখা দিতে পারে। শরীরে কোলেস্টেরলের পরিমান বৃদ্ধি পায় মূলত খাদ্যাভ্যাস ও অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের কারণে। সচেতন থাকলে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রার বৃদ্ধি রোধ করা সম্ভব।

এবার চলুন জেনে নেই কোলেস্টেরল বৃদ্ধির কারণগুলো-

ওজন

অতিরিক্ত ওজন শরীরে ট্রাইগ্লিসারিড বাড়ায় এবং HDL অর্থাৎ ভালো কোলেস্টেরল কমিয়ে ফেলে। ভালো কোলেস্টেরল কমে গেলে শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের আধিপত্য বেড়ে যায় এবং বিবিধ স্বাস্থ্য জটিলতা দেখা দেয়।

অলসতা

সারাদিন কর্মহীন বা শুয়ে বসে থাকলে শরীরে LDL অর্থাৎ খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং ভালো কোলেস্টেরল কমিয়ে ফেলে। অর্থাৎ শারীরিক পরিশ্রমহীন জীবন যাপন বা অলসতা দেহে মন্দ কোলেস্টেরল বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।

খাবার তালিকা

অতিরিক্ত তৈলাক্ত ও সম্পৃক্ত চর্বিযুক্ত খাবার খেলে সাধাণরত কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পায়। প্রতিদিনের খাবার তালিকায় প্রচুর পরিমাণে সম্পৃক্ত চর্বিযুক্ত খাবার থাকলে দেহে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। প্রাণিজ চর্বি যেমন- গরু বা খাসির মাংস, যেকোন লাল মাংস, শুকরের মাংস, ডিম, দুধ ও পনিরে প্রচুর পরিমানে সম্পৃক্ত চর্বি আছে। মার্জারিন, নারিকেল তেল ও পাম তেলেও প্রচুর পরিমাণে সম্পৃক্ত চর্বি থাকে। এছাড়া জাঙ্ক ফুড সহ প্রায় সব ধরণের বিস্কুট, ক্র্যাকার ও চিপসেও প্রচুর পরিমানে সম্পৃক্ত চর্বি থাকে।

বয়স

সধারণত বিশ বছর বয়সের পর থেকে আমাদের দেহে স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেই কোলেস্টেরলের পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকে। পুরুষের ক্ষেত্রে ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত কোলেস্টেরল বাড়তে থাকে এবং নারীদের কোলেস্টেরল আগে তেমন একটা না বাড়লেও মেনোপজের পরে কোলেস্টেরল বাড়ে।

পারিবারিক স্বাস্থ্য ইতিহাস

পরিবারের কারো শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকলে আপনারও ভবিষ্যতে সমস্যায় পরার আশঙ্কা আছে। তাই পরিবারে কারো এই সমস্যা আছে কিনা জেনে নিলে আগে থেকেই সচেতন হওয়া সম্ভব।

ধূমপান ও মদ

চিকিৎসকেদের মতে অনিয়ন্ত্রিত জীবন এবং ধূমপান-মদ্যপানের মতো নেশা করার কারণে রক্তে বাড়তে শুরু করে খারাপ কোলেস্টেরল ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা। বিশেষ করে ধূমপান মানবদেহে নানাবিধ শারীরিক সমস্যা সৃষ্টির পাশাপাশি কোলেস্টেরল বৃদ্ধির এক কারণ। ধূমপান করলে শরীরের ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে যায় এবং ফলাফল হিসেবে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।

অসুখ ও ওষুধ

ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ থাকলেও কোলেস্টেরল বাড়তে পারে। স্টেরয়েড, হাইড্রোকোথায়াজাইড জাতীয় ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।
আমরা যদি একটু সচেতন হই তাহলে দেহে কোলেস্টেরলের বৃদ্ধির মাত্রা রোধ করতে পারবো। প্রতি বছর একবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত। কারণ বিশেষ কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন হার্টের অসুখ, হাইপোথাইরয়েডিসম ও ডায়াবেটিসের কারণে শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। আমেরিকান হার্ট আসোসিয়েশনের মতে বিশ বছর এবং তার চেয়ে বেশি বয়েসী সবার জন্য বছরে অন্তর একবার কোলেস্টেরলের পরীক্ষা করা উচিত। তাই আগে থেকে সচেতন থাকতে ও বিপদ এড়াতে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে নিন প্রতিবছর একবার করে।

Sharing is caring!

Nusrat Tarannum Mouni

নুসরাত তারান্নুম মৌনী বি‌ভিন্ন ব্লগ ও লিটলম্যা‌গে লেখা‌লে‌খির সা‌থে সম্পৃক্ত। পেশাগত জীবনে গ্রামীণ ফোন সহ বিভিন্ন সুনামধন্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। পাবলিক রিলেশন এক্সপার্ট। বাঙালী ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। খাদ্য, পুষ্ঠি ও ডায়েট নিয়ে পড়াশুনার পাশাপাশি এ নিয়ে নিয়মিত প্রবন্ধ লিখেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *