আমেরিকান ছোট গল্পের মুকুটহীন সম্রাট ও’ হেনরি

আমেরিকান ছোট গল্পের মুকুটহীন সম্রাট ও’ হেনরি

জীবনী
আমাদের দেশে একসময় নবম-দশম শ্রেণিতে ও’ হেনরি রচিত ‘দ্য গিফট অভ দ্য ম্যাজাই’ নামক একটি গল্প পড়ানো হতো। পাঠ্য হওয়া এই ছোট গল্পটি বাংলাদেশে খুবই পরিচিত ও জনপ্রিয়। বিশ্বের সর্বাধিক পঠিত ছোটগল্পগুলোর একটি এটি। খুব সাধারণ একটি গল্প। কিন্তু লেখকের কলমের অসাধারণ আঁচড়ে তা হয়ে উঠেছে বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম পঠিত ও জনপ্রিয় ছোটগল্পের একটি।
জিম আর ডেলা নামের দুই দম্পতি চরিত্রকে ঘিরে রচিত হয়েছে গল্পটি। এ গল্প পাঠে আমরা দেখতে পাই প্রচন্ড ভালোবাসা থেকে কিভাবে একজন অপরজনকে ক্রিসমাস উপহার দিতে গিয়ে নিজেদের শ্রেষ্ঠ সম্পদকে বিসর্জন দিয়েছিল, যদিও আপাতত দৃষ্টিতে মনে হয়েছে তাদের বোকামির কারণে উপহার দু’টো ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে।
বাইবেলে অনুসারে, সদ্যভূমিষ্ঠ যিশুর জন্য উপহার নিয়ে এসেছিলেন তিন জ্ঞানী ম্যাজাই। আর লেখকের কথায় এই নবদম্পতির উপহার বিনিময় যদিও আপাতদৃষ্টিতে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে, কিন্তু একটু ভালো করে ভাবলেই বোঝা যাবে পরস্পরের জন্য যে ত্যাগ তারা স্বীকার করেছে, তার মূল্য সেই তিন ম্যাজাইয়ের দেওয়া উপহার থেকে কিছুমাত্র কম নয়। এই অসাধরণ ক্লাসিক গল্পটির দুই চরিত্র জিম আর ডেলা যার হাত স্থান করে নিয়েছে অগণিত পাঠকের হৃদয়ে। আর সেই লেখকের নাম উইলিয়াম সিডনি পোর্টার। উইলিয়াম সিডনি পোর্টার- আমেরিকান এই জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক তাঁর পাঠক ভক্তদের কাছে ও’ হেনরি নামেই সর্বাধিক পরিচিত। ও’ হেনরি তাঁর ছদ্মনাম।

জন্ম ও কর্ম

আমেরিকার নর্থ ক্যারোলিনা রাজ্যের গ্রিনস্বরোতে ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দের ১১ সেপ্টেম্বর এই জনপ্রিয় লেখকের জন্ম। প্রথাগত শিক্ষাব্যবস্থার সুযোগ লাভে বঞ্চিত এই লেখকের জীবন ছিল বৈচিত্র্যতায় পূর্ণ।
জীবিকার তাগিদে কাউবয় থেকে শুরু করে বাবুর্চি, ওষুধের দোকানের কর্মচারী, সাপ্তাহিক পত্রিকার ব্যবস্থাপক, কলাম-লেখক, ডাক গাড়ির চালক এমনকি ব্যাংকের কেরানির চাকুরির মতো কাজ করতে হয়েছে তাঁকে। শেষোক্ত দায়িত্বটি পালন করতে গিয়ে ১৮৯৬ সালে ব্যাংকের পাঁচ হাজার ডলার তহবিল তছারুপের অভিযোগ আনা হয় তাঁর বিরুদ্ধে। এমনকি এ জন্যে তাঁকে ১৮৯৮ সাল থেকে তিন বছর পর্যন্ত জেল কাটতে হয়েছে শেষমেশ। যদিও এ অভিযোগ তিনি বরাবরই অস্বীকার করে গেছেন। তবে এ কথা সত্য যে এই জেল জীবনেই তাঁর সত্যিকার সাহিত্য চর্চার শুরু হয়।
১৮৮৭ সালে অ্যাথল এস্টেস রোচকে বিয়ে করেন তিনি। প্রথম সন্তানটি জন্মের কিছুদিন পরই মারা যায়। তারপর ১৮৮৯ সালে জন্ম নেয় কন্যা মার্গারেট। ১৮৯৭ সালের জুলাই মাসে মারাত্মক অসুখে ভোগে তাঁর স্ত্রী মারা যান। ১৯০১ সালে জেল থেকে মুক্তি পেয়েই হেনরী চলে যান পিটসবার্গে বসবাসরত মেয়ের কাছে। তারপর সেখান থেকে ১৯০২ সালে চলে আসেন তাঁর প্রিয় শহর নিউইয়র্কে। এখানেই ‘নিউইয়র্ক সানডে ওয়াল্ড’ পত্রিকার সাথে সপ্তাহে একটি করে গল্প লেখার জন্যে চুক্তিবদ্ধ হন এবং লিখেন প্রায় শতাধিক গল্প। এরপর ১৯০৭ সালে শৈবের বান্ধবী সারা লিন্ডসে কোলম্যানের সাথে তিনি দ্বিতীয় বিবাহে আবদ্ধ হন। যদিও এক বছরের বেশি টেকেনি এ বিয়ে। এ জন্যে দায়ী করা হয় তাঁর অত্যাধিক মদ্যপানের নেশা আর স্বাস্থ্যের অবনতিকে। অবশেষে ছ’মাস রোগ ভুগার পর ১৯১০ সালের ৫ জুন মাত্র ৪৮ বছর বয়সে বহুমূত্র ও যকৃত পচনে মৃত্যু হয় উইলিয়াম সিডনী পোর্টারের। মৃত্যুর শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত তিনি পুরোপুরি সজাগ ছিলেন।

 

তাঁর জীবনের শেষ উক্তি ছিল এমন:
“আলোগুলো জ্বেলে দাও, আমি অন্ধকারে আপন ঘরে যেতে চাই না।”

 

বিশ্বব্যাপী তাঁর গল্পগুলো ব্যাপকভাবে অনূদিত হয়েছে। সারা জীবনে ও, হেনরী ২৭০টির মতো ছোট গল্প লিখেছেন। যেগুলো কৌতুকতা, বৈচিত্রতা, আবেগ, হৃদয় আকুতি, বাস্তবতা আর চরিত্রে বহু রূপকতায় ভরপুর। অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে খুব সুন্দরভাবে তিনি জীবনকে রূপায়িত করেছেন তাঁর অসাধারণ লেখনীর মাধ্যমে। মৃত্যুর পর ও. হেনরী আরো বেশি জনপ্রিয়তার শীর্ষে আসেন। তাইতো মৃত্যুর দেড় শতক পরও আজো তাঁর অনেক গল্প কিংবদন্তির মতো বিরাজমান। ক্লাসিক হিসেবে পাঠ্য হয়েছে অনেক দেশে। পল হরোউইটস্ ও. হেনরীকে নিয়ে তাঁর বক্তব্যে বলেন: “মার্ক টোয়েইনের পর এমন খাঁটি আমেরিকান লেখককে ‘মার্কিন শেখভ’ বা ‘ইয়াংকি মপাসাঁ’ বললেও অত্যুক্তি হয় না।” তাঁকে বলা হয়ে থাকে আমেরিকান ছোট গল্পের মুকুটহীন সম্রাট।

 

তাঁর লিখা বিখ্যাত ছোট গল্প ও সংকলন সমূহ

তিনি অমর হয়ে থাকবেন তাঁর অনবদ্য ছোট গল্প ও সংকলন The Gift of the Magi, A Cosmopolite in a Café, Between Rounds, The Skylight Room, A Service of Love, The Cop and the Anthem, The Love-philter of Ikey Shorenstein, The Furnished Room, The Last Leaf, The Poet and the Peasant, A Ramble in Aphasia, A Municipal Report, Cabbages and Kings, The Four Million, The Trimmed Lamp, Heart of the West, The Voice of the City, Roads of Destiny, Options, Strictly Business, Whirligigs, The Gentle Grafter, The Caliph- Cupid and the Clock ইত্যাদির জন্যে। তাঁর বেশিরভাগ গল্প রূপকাশ্রিত।

 

ছোটগল্পকার হিসেবে এ লেখকের জনপ্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করার মতো খুব বেশি লেখক এখন পর্যন্ত আসেননি। মৃত্যুর অব্যবহিত পরেই তার আরো কয়েকটি সংকলন প্রকাশিত হয়। তার প্রয়াণের পরবর্তী মাত্র দশ বছরে বিক্রি হয় তার লেখা পাঁচ মিলিয়ন বই। সংখ্যার বিচারে তার থেকে এগিয়ে ছিলেন কেবল রুডিয়ার্ড কিপলিং। আজও ও’ হেনরির গল্পের আবেদন এতটুকু কমেনি। ও’ হেনরির পৈত্রিক বাড়ি পরিণত করা হয়েছে জাদুঘরে। প্রতি বছর বহু মানুষ সেখানে ঘুরতে যান। তাঁর নামানুসারে প্রতি বছর জাতীয়ভাবে ছোটগল্পের জন্যে দেয়া হয় ও’ হেনরি পুরস্কার।

 

ও’ হেনরি পরিবার; Image source: greensboro.com

 

ও’ হেনরি-র কয়েকটি জনপ্রিয় উক্তি

The true adventurer goes forth aimless and uncalculating to meet and greet unknown fate.
– O. Henry
We can’t buy one minute of time with cash; if we could, rich people would live longer.
– O. Henry
We can’t buy one minute of time with cash; if we could, rich people would live longer.
– O. Henry
Turn up the lights. I don’t want to go home in the dark.
– O. Henry
Life is made up of sobs, sniffles, and smiles, with sniffles predominating.
– O. Henry

Sharing is caring!

Shajahan Manik

ইংরেজি প্রভাষক শাহ্জাহান মানিক একাধারে কবি, লেখক, গবেষক ও অনুবাদক। একাধিক কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও তার অনুদিত বইয়ের সংখ্যা ১০টি। এছাড়া সায়েন্স ফিকশন, সম্পাদনা, ছোটদের বইয়ের পাশাপাশি তার রয়েছে ইংরেজি শেখার বই। তার সর্বশেষ প্রকাশিত গ্রন্থ হচ্ছে- মানব কল্যাণে মুসলিম বিজ্ঞানীদের অবদান।

https://besorgo.com

1 thought on “আমেরিকান ছোট গল্পের মুকুটহীন সম্রাট ও’ হেনরি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *