‘ঈশ্বরকণা’ নিয়ে সারা বিশ্বে বেশ হৈ-চৈ হচ্ছে। অথচ এই কণা আবিষ্কারের পেছনে যাদের অবদান তাদের অন্যতম হচ্ছেন মুসলিম বিজ্ঞানী পদার্থবিদ প্রফেসর আব্দুস সালাম।
সম্প্রতি ইউরোপীয় বিজ্ঞানীরা ‘হিগস বোসন’ কণার মতো আরেকটি কণার অস্তিত্বের কথা জানানোর পর, আব্দুস সালামের নাম গণমাধ্যমের আলোচনায় উঠে আসে। প্রফেসর আবদুস সালামের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান ইলেকট্রোম্যা গনেটিক ফোর্স ও দুর্বল নিউক্লিয়ার ফোর্সের একত্রীকরণ তত্ত্ব। যার জন্য ১৯৭৯ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন এই বিজ্ঞানী।
পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মগুলো কণিকা এবং প্রতিকণিকার ক্ষেত্রে অপরিবর্তিত থাকে। একে প্যারিটি বলে। কিন্তু দুর্বল নিউক্লিয় বলের ক্ষেত্রে এই তত্ত্বটি বহাল থাকে না। সেখানে প্যারিটি ভঙ্গ হয়। কাইরাল প্রতিসাম্য দুর্বল মিথস্ক্রিয়ার ক্ষেত্রে ভঙ্গ হলেও তড়িৎচুম্বক মিথস্ক্রিয়ায় বজায় থাকে। আব্দুস সালাম এই সমস্যা নিয়ে নিজের পিএইচডি শিক্ষার্থী রোনাল্ড শ এর সাথে কাজ করতে শুরু করেন।
উপরে যে সমস্যার কথা বলা হয়েছে, তার সমাধানকল্পে বিজ্ঞানীরা বলেন যে, ইলেকট্রোম্যাগনেটিক বল উৎপন্ন হয় ভরহীন ফোটন কণা থেকে তাই প্যারিটি বজায় থাকে। কিন্তু ইলেকট্রোউইক বলের ক্ষেত্রে যেহেতু প্যারিটি ভঙ্গ হয়, সেক্ষেত্রে নিশ্চয়ই কোনো ভরযুক্ত কণা এর সাথে যুক্ত আছে। এই চিন্তা থেকেই ড এবং ত বোসনের উৎপত্তি। এই নতুন প্রস্তাবিত কণাদ্বয় সমস্যা সমাধানকারী সে ভরযুক্ত কণা। ড বোসন কণা এখানে একটি মধ্যবর্তী কণা। বিটা ক্ষয়ের ক্ষেত্রে একটি নিউট্রন প্রথমে ড বোসন কণায় রূপান্তরিত হয় এবং এর চার্জ থাকে ঋণাত্মক। তবে ড বোসন হিসেবে এর স্থায়িত্ব অস্বাভাবিকভাবে কম। 3×10^-25 সেকেন্ডের মধ্যেই এই ড বোসন কণা ভেঙে যায় এবং একটি উচ্চশক্তির ইলেকট্রন, একটি প্রোটন এবং একটি ইলেকট্রন অ্যান্টিনিউট্রিনোতে রূপান্তরিত হয়। এক্ষেত্রে ত বোসন চার্জহীন থাকে।
পিটার হিগসের বোসন কণা তত্ত্বের সহায়তায় প্রফেসার সালাম, স্টিভেন ওয়েনবার্গ আর শেলডন লি গ্ল্যাশো তাদের গবেষণায় মনোনিবেশ করেন। তারপর হিগস মেকানিজম, গজ তত্ত্ব আর ইলেকট্রোম্যাগনেটিক মিথস্ক্রিয়া নিয়ে গবেষণা করে তারা সফলভাবে পদার্থবিজ্ঞানের দ্বিতীয় ঐক্যবদ্ধ তত্ত্ব দাঁড় করাতে সক্ষম হন। ইলেকট্রোম্যাগনেটিক এবং দুর্বল নিউক্লিয় বলকে ঐক্যবদ্ধ করে তারা ইলেকট্রোউইক বলের পরিচয় করিয়ে দেন। আর এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের জন্য ১৯৭৯ সালে প্রফেসার সালাম, স্টিভেন ওয়েনবার্গ আর শেলডন লি গ্ল্যাশোর সঙ্গে যৌথভাবে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। আর এইভাবে ইতিহাসে প্রফেসার সালাম হয়ে যান প্রথম মুসলমান নোবেলবিজয়ী বিজ্ঞানী।