হাই কমোড বা ইংলিশ টয়লেটকে একটা সময় মনে করা হতো শুধু স্বচ্ছল বা অভিজাত পরিবারের ব্যবহার্য জিনিস। কিন্তু সময় পাল্টেছে। আজ কারো বাসা, হোটেল অথবা কোন হাসপাতালে গিয়ে টয়লেট বা শৌচাগার ব্যবহার করতে চাইলে এই হাই-কমোডের দেখা পাওয়া যায়।বর্তমানে কম-বেশি শহরের প্রায় প্রতিটি বাসায় এই ইংলিশ কমোড আমরা দেখতে পাই। গ্রামেও কমতি কম নেই। বিশেষ করে যেসব গৃহে রুগী বা বয়োজেষ্ঠ্য ব্যক্তি রয়েছেন সেসব গৃহে প্রয়োজনে শৌচাগারে হাই কমোড বসাতে হয় বাধ্যতামূলক ভাবে। তাছাড়া বাড়ির আভিজাত্য প্রকাশেও হাই কমোডের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে আমাদের শৌচাগারে। কিন্তু সমস্যা হলো নিত্য ব্যবহার্য এই আধুনিক হাই কমোডের সঠিক ব্যবহার পদ্ধতি আমরা অনেকেই জানি না। আর এ কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনেকেরই অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। লজ্জা পাওয়ার ভয়ে কারো কাছে বিষয়টা নিয়ে জিজ্ঞেস করতেও অনেকে পারে না।
এই আর্টিকেলে কিভাবে সঠিকভাবে এই হাই কমোড ব্যবহার করতে হয় তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আশাকরি সবার কাজে আসবে।
প্রকৃতির ডাকে সারা দেবার পাশাপাশি টয়লেট বা শৌচাগার আজ রুচিবোধ,
আভিজাত্য ও সামাজিক মর্যাদা নির্ণয়ের এক মানদণ্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে
টয়লেটে মূলত দুই ধরণের কমোড ব্যবহার দেখা যায়: পশ্চিমা ইংলিশ টয়লেট তথা
হাই কমোড এবং স্কোয়াট তথা সমতল মেঝের লো কমোড। যুগ যুগ ধরে ভারতীয়
উপমহাদেশে লো কমোডের ব্যবহার হয়ে আসছে। বর্তমানেও সব মিলিয়ে এর ব্যবহার
সবচেয়ে বেশী। তবে ইদানিং শহরকেন্দ্রিক ইংলিশ টয়লেট বা হাই কমোডের ব্যবহার ও
চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ইংলিশ টয়লেট বা হাই কমোড ব্যবহার করার সঠিক পদ্ধতি
১) শৌচকার্যে কমোড ব্যবহার করার সময় সর্বপ্রথম হাই কমোডের রিং কভার নামিয়ে চেয়ারের মতো বসুন। কখনোও কমোডের উপর উঠে বসা উচিত হবে না। কারণ এতে কমোড ভেঙ্গে যে কোন সময় মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
২) ব্যক্তিগত টয়লেট ব্যতীত শৌচকার্যে সরাসরি হাই কমোডের সিট রিং কভারের উপর বসা উচিৎ হবে না। এতে অন্য কারো থেকে সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে টিস্যু পেপার বিছিয়ে তার উপর বসা শ্রেয় হবে। সিট রিং কভার ভেজা থাকলে টিস্যু দিয়ে মুছে তারপর বসুন।
৩) অনেক ক্ষেত্রে মলত্যাগের বেলায় কমোড ব্যবহার করার সময় ভেতরের ময়লা পানি ছিটকে পশ্চাদপদে লাগে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে একটি ছোট ট্রিপ ব্যবহার করা যেতে পারে। বসার পূর্বে কমোডের ভেতরস্থ পানির উপর একখন্ড টিসু পেপার ফেলে রাখলে প্রাকৃতিক কার্য সম্পাদন কালে ভেতরের পানি ছিটকে উঠবে না।
৪) অবশ্যই কাজ শেষে কমোড ব্যবহারের পর ফ্লাশ করুন। প্রতিটি কমোডের ঠিক উপরের অংশে একটি বাটন থাকে। এটি চাপ দিয়ে ফ্ল্যাশ করতে ভুলবেন না।
৫) অনেক সময় কমোডের ফ্লাশে একসাথে দুইটি বাটন দেখা যায়। ফ্ল্যাশ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো পানির অপচয় রোধে এই বিশেষ ব্যবস্থা রেখেছে যা অনেকেই জানি না। অপেক্ষাকৃত বড় বাটন বড় ফ্ল্যাশের জন্য আর ছোট বাটন ছোট ফ্ল্যাশের জন্য।
সাধারণত একটি বড় ফ্ল্যাশে সাধারণত ৬ থেকে ৭ লিটার পানি খরচ বা বের হয়। আর ছোট ফ্ল্যাশে বের হয় ৩ থেকে সাড়ে ৪ লিটার পানি। তাই বড় কোন প্রয়োজন ছাড়া বড় ফ্ল্যাশ না চাপাই ভালো। সে ক্ষেত্রে ছোট বাটনটি চাপা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
৬) ফ্লাশ শেষে সিট রিং কভার উঠিয়ে রাখতে ভুলবেন না। এতে পরবর্তীজন স্বচ্ছন্দে কমোড ব্যবহার করতে পারবে।
৭) বর্তমানে প্রায় সব ইংলিশ টয়লেটে হ্যান্ড শাওয়াররে ব্যবস্থা থাকে। শৌচকার্যে সেটি ব্যবহার করে করতে ভুলবেন না। যদি হ্যান্ড শাওয়ারের ব্যবস্থা না থাকে তাহলে কল ব্যবহার করতে হবে।
৮) মলত্যাগের পর হাই কমোডের ছিদ্রযুক্ত ঢাকনাটি পরিষ্কার করুন। এতে আপনার পরে যিনি টয়লেট ব্যবহার করবেন তিনি স্বাচ্ছন্দে তা ব্যবহার করতে পারবেন।
৯) কমোডের ভিতর টিস্যু পেপার ছাড়া আর কোন কিছু ফেলা উচিত না। এতে কমোড বন্ধ হয়ে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়বে।
১০) দামী হাই-কমোডের প্রায় প্রতিটিতে ঢাকনা থাকে। এক্ষেত্রে সব কাজ শেষে কমোডের ঢাকনা নামিয়ে রাখুন। সর্বোপরি শৌচাগারের মেঝে বা টাইলসে যেন পানি জমে না সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। না হলে যে করো পা পিছলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
উপরি উক্ত বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল রাখলে কেউ আশাকরি ইংলিশ টয়লেট বা হাই কমোড ব্যবহারে অসুবিধার সম্মুখীন হবে না।