প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়

বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়

ইতিহাস নির্বাচিত পোস্ট
বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সবারই কম বেশি আগ্রহ থাকাটা স্বাভাবিক। গিনেজ বুক অফ ওয়ার্ল্ডের রেকর্ড অনুযায়ী বিশ্বের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে মরোক্কোর কারাউইন ইউনিভার্সিটি।
আধুনিক বিশ্বের সবচেয়ে নামকরা দুটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যামব্রিজ এবং অক্সফোর্ড প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যথাক্রমে ১২০৯ এবং ১০৯৬ সালে। তবে পুরো বিশ্বের তো বটেই, এগুলোর কোনোটিই ইউরোপেরও প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না। ইউরোপের সবচেয়ে প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়, ইতালির বোলোগনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১০৮৮ সালে। তারও প্রায় একশ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মিসরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু আল-আজহারেরও প্রায় একশ বছর আগে, আজ থেকে প্রায় সাড়ে এগারোশ’ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মরক্কোর কারাউইন ইউনিভার্সিটি। ১৯৬০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টির ১১০০তম বর্ষপূর্তি হয়। ইউনেস্কো এবং গিনেজ বুক অফ ওয়ার্ল্ডের রেকর্ড অনুযায়ী এটিই হচ্ছে বিশ্বের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় এবং ডিগ্রি প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান, যা এখন পর্যন্ত একটানা চালু আছে। গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস বিশ্ববিদ্যালয়টি সম্পর্কে বলছে, ‘The oldest existing, and continually operating educational institution in the world is the University of Karueein, founded in 859 AD in Fez, Morocco.’

 

মসজিদ থেকেই বিশ্বের প্রথম এই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, আর এই ঐতিহাসিক বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন একজন মুসলিম নারী যার নাম ফাতিমা আল-ফিহরি! জ্ঞান-বিজ্ঞানের সম্প্রসারণ ও গবেষণায় তাঁর এই অবদান কোন মহামানব থেকে কোন অংশে কম না।

মুসলিম উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী পিতার কাছ থেকে পাওয়া সম্পত্তি ব্যয় করার ক্ষেত্রে কন্যারা কারো কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য না। ফাতিমা এবং তাঁর বোন মারিয়ামও চাইলে এই সম্পত্তি যেকোনোভাবে ব্যয় করতে পারতেন। কিন্তু কোনো বিলাসিতার পেছনে ব্যয় না করে তারা সিদ্ধান্ত নেন, এই অর্থ তারা ব্যয় করবেন ধর্মের জন্য, মানবতার কল্যাণের জন্য। তারা তাদের পিতার জন্য ওয়াকফ বা সাদাকায়ে জারিয়া হিসেবে মসজিদ বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করবেন। আর এভাবেই প্রথমে মসজিদ এর যাত্রা শুরু হয় কারাউইনের। ফাতিমা প্রথমে তার মসজিদ নির্মাণের জন্য জমি ক্রয় করতে শুরু করেন এবং এরপর ৮৫৯ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বরের ৩ তারিখে মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু করেন। ফাতিমা শুধু মসজিদ নির্মাণের জন্য অর্থ দান করেই নিজের দায়িত্ব শেষ করেননি। তিনি নিজে সার্বক্ষণিকভাবে উপস্থিত থেকে এর নির্মাণকাজ তদারকি করেছিলেন। এবং শুরুর দিন থেকে শুরু করে নির্মাণ শেষ হওয়া পর্যন্ত প্রতিটি দিন তিনি রোযা রেখেছিলেন।
কিছু বর্ণনা অনুযায়ী, মসজিদটির নির্মাণ সম্পন্ন হতে সময় লেগেছিল ১৮ বছর, যদিও অন্য কিছু বর্ণনা থেকে ১১ বছরের বর্ণনাও পাওয়া যায়। যেদিন নির্মাণ শেষ হয়, সেদিন তিনি নিজের নির্মিত মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করে নামাজ আদায় করেন এবং আল্লাহ্র প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। জন্মভূমি কাইরাওয়ানের নামানুসারে তিনি মসজিদটির নাম রাখেন কারাউইন মসজিদ।
মসজিদ নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পর ফাতিমা মসজিদের বর্ধিতাংশে একটি মাদ্রাসা নির্মাণ করেন। অল্পদিনের মধ্যেই সেখানে ইসলামী শিক্ষার পাশাপাশি ব্যাকরণ, গণিত, চিকিৎসাশাস্ত্র, জ্যোতির্বিদ্যা, ইতিহাস, রসায়ন, ভূগোলসহ বিভিন্ন বিষয়ে পাঠদান শুরু হয়। বিভিন্ন বৈচিত্রময় বিষয়ের উপর আনুষ্ঠানিক শিক্ষার জন্য ডিগ্রি প্রদানকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এটিই প্রাচীনতম, যা এখনও টিকে আছে এবং গত সাড়ে এগারোশ’ বছর ধরে একটানা শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে মানুষকে আলোকিত করে আসছে।
এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাই বিশ্ববিদ্যালয়টির একমাত্র সাফল্য নয় বরং এর বিষয়ভিত্তিক অধ্যয়নের প্রসারতার কারণে শীঘ্রই এর খ্যাতি সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। মুসলমানদের পাশাপাশি অনেক অমুসলিম জ্ঞানসাধকও এই বিশ্ববিদ্যালয় হতে শিক্ষাগ্রহণ করেন। কোরআন, হাদিস ও ইসলামি আইনশাস্ত্রের পাশাপাশি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোল, জ্যোতির্বিজ্ঞান, ব্যাকরণ, রসায়ন, চিকিৎসাশাস্ত্র, গণিত, সঙ্গীতসহ বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে পাঠদান করা হতো। ফাতিমা আল-ফিহরির তৈরি গ্রান্ড মসজিদের এলাকায় প্রতিষ্ঠিত এই আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়টি পরবর্তীতে অসংখ্য বিজ্ঞানীর জন্ম দিয়েছে।

Sharing is caring!

Shajahan Manik

ইংরেজি প্রভাষক শাহ্জাহান মানিক একাধারে কবি, লেখক, গবেষক ও অনুবাদক। একাধিক কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও তার অনুদিত বইয়ের সংখ্যা ১০টি। এছাড়া সায়েন্স ফিকশন, সম্পাদনা, ছোটদের বইয়ের পাশাপাশি তার রয়েছে ইংরেজি শেখার বই। তার সর্বশেষ প্রকাশিত গ্রন্থ হচ্ছে- মানব কল্যাণে মুসলিম বিজ্ঞানীদের অবদান।

https://besorgo.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *