আমাদের অনেকেই কোন সমস্যা বা প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্মুখীন হলে CAN’T নামক এই দূর্দশাগ্রস্থ অনুভূতিটির সম্মুখীন হই। অনেকের মধ্যে আবার ইতিবাচক চিন্তার পাশাপাশি ‘আমি এটা করতে পারবো না’ বা CAN’T প্রতিক্রিয়ার ভাবটা বিদ্যমান। এই আতংকজনক সমস্যাটা কেবল অল্প সংখ্যক মানুষের ক্ষেত্রে যে ঘটে তা নয়। বরং আত্মবিশ্বাসের এ ধরনের অভাবের সাথে অনেক লোকই সংগ্রাম করে থাকে। বড় কোন রোগের মতই এই ‘আমি পারবো না’ উপসর্গটি মানুষকে তার পরিপূর্ণ ও সুখি জীবন যাপনে ব্যাহত করে।
“আমি ধূমপান ছাড়তে পারবো না। আমি ঋণের বাইরে যেতে পারবো না। আমার কাজে আমি এটা করতে পারবো না।”
কোন পুরুষ কিংবা মহিলা প্রকৃত চেষ্টা করার পরিবর্তে এই অজুহাত গুলোর পক্ষে সমর্থন দিয়ে মূলত: ব্যর্থতাকে মেনে নেয়। এবং গবেষণায় দেখা গেছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ধূমপান, ঋণ, কাজ বা চাকুরি তাদের সমস্যা না। বরং সমস্যাটা হচ্ছে তাদের “আমি পারবো না” মনোভাব।
আপনি যদি জীবনে একবার এই পঙ্গুত্ব করা “আমি পারবো না” বা CAN’T বাধাটি অতিক্রম করতে পারেন তাহলে আপনি যা করতে পারবেন তার সীমা থাকবে না। আর তা করার জন্য একটা সহজ ও কার্যকর উপায় আছে। সেটি হচ্ছে নরম্যান ভিনসেন্ট পিল এর থিউরি অনুসরণ করা।
CAN’T থেকে ’T মুছে ফেলতে নরম্যান ভিনসেন্ট পিল এর থিউরি
পঙ্গুত্ব করা “আমি পারবো না” বা CAN’T সমস্যাটির সমাধানে নরম্যান ভিনসেন্ট পিল চমৎকার এক বাস্তব ঘটনা বর্ণনা করেছেন। তিনি তাঁর The Power of Positive Living বই এ নিয়ে চমৎকার এক অভিজ্ঞতার বর্ণনা করেন-
”আমার পরিবারের সবাই ছিলেন বক্তা এবং আমারও স্বপ্ন ছিল তাদের মতো হওয়া। কিন্তু লোকজনের সামনে দাঁড়ানোর ভাবনা আমাকে আতঙ্কিত করতো। আমি আজও মনে করতে পারি স্কুলে পড়াকালিন সে ঠোঁটকাটা ছোট মেয়েটির কথা যে একদিন স্কুলের অ্যাসেম্বেলির সামনের সারিতে বসেছিল। আমার বক্তব্যের সময় যখন আমি কথা সংক্ষিপ্ত করার চেষ্টা করছি তখন সে একটু উচ্চস্বরে ফিসফিস করে বলেছিল, ‘দেখো তার পা কাঁপছে।’
আজ আমি মনে করি আমার পা তেমন করে সেদিনের ন্যায় কাঁপতো যদিনা জর্জ রিভর্স এর সাথে আমার সাক্ষাৎ না হতো। জর্জ রিভর্স ছিলেন কিনকিনাটির পুরানো উইলিয়াম এ্যভিন্যু স্কুলের আমার পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষক। তিনি ছিলেন একজন কঠোর নিয়মানুবর্তী ব্যক্তি যেমনটা ঐ দিনগুলোতে অনেক শিক্ষকরাই ছিলেন।
মি. রিভর্স এর আচরণের বিষয়ে কঠোর সমালোচনা থাকা সত্ত্বেও তিনি এমন খামখেয়ালি উপায়ে বলতেন এবং কার্যকলাপ করতেন যে কেউ কখনো তা ভুলতো না। একদিন ক্লাসে চিৎকার করে সবার উদ্দেশ্যে বললেন, ‘চুপ কর!’ এবং সাথে সাথে সবাই চুপ করে যায়।
আমি এখনও তার পায়ের আওয়াজ শুনতে পাই যেমন করে তিনি বোর্ডের দিকে অগ্রসর হয়েছিলেন এবং চক দিয়ে বড় অক্ষরে CAN’T শব্দটি লিখেছিলেন।
আমরা সবাই জানতাম তিনি কি চান, তাই আমরা ”Knock the T off the CAN’T” জপতে লাগলাম। এবং মুছে ফেলার ভঙ্গিতে তিনি শুধু মাত্র কমা সহ T মুছলেন, ফলে CAN শব্দটি পরিষ্কার এবং স্বতন্ত্রভাবে তার অবস্থানে রইল। ঐ দীর্ঘদিন আগে আমি লেখাটি যেমন দেখেছিলাম তা আজও পরিষ্কার ভাবে দেখতে পাই।
এই আবিস্মরণীয় পাঠ শেষে মি. রিভর্স দৃঢ় কন্ঠে বলেছিলেন, “এটাকে তোমাদের একটা শিক্ষা হতে দাও এবং এটি কখনোই ভুলবে না। তুমি পারবে যদি মনে কর তাহলে তুমি তা করতে পারবে।” তিনি ক্লাস রুমে সবার দিকে একবার তাকালেন এবং বললেন, ‘তাই সবসময় ভাববে যে তুমি পারবে।”
তাই নরম্যান ভিনসেন্ট পিল এর সে শিক্ষার মতো আজকের পর থেকে আপনার জীবনের সমস্ত CAN’T থেকে কমা সহ T মুছে ফেলুন। দেখবেন এক আশ্চর্য শক্তি আপনার উপর ভর করেছে, যা দিয়ে অনেক অসম্ভবকে আপনি সম্ভব করতে পারবেন।
সূত্র: শাহ্জাহান মানিক অনুদিত নরম্যান ভিনসেন্ট পিল এর বিখ্যাত বই ”The Power of Positive Living’‘ থেকে।