সক্রেটিস বাণী ও উক্তি

সক্রেটিসের কিছু বিখ্যাত জ্ঞানমূলক বাণী ও দার্শনিক উক্তি

মোটিভেশন
সক্রেটিস ছিলেন পাশ্চাত্য দর্শনের অন্যতম প্রধান প্রবক্তা। হাজার বছর ধরে তাঁর দর্শন, তত্ত্ব ও ভাবনার অমীয় ধারা মানুষকে উজ্জ্বিবিত করে চলেছে ও সভ্যতাকে পথ দেখাচ্ছে। এমনকি তাঁর এই স্পষ্ট ও সাহসী দর্শন তৎকালীন শাসকদের কোপানলে পড়লে এক অন্যায় ও প্রহসনের বিচারে তাঁকে হেমলক বিষ পানে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।সক্রেটিসের দর্শনের অন্যতম দিক হচ্ছে যেকোনো পরিস্থিতে নিজের অবস্থান ধরে রাখা যদি কোনো ভুল না থাকে। তাঁর দর্শনের আরেকটি দিক ছিল এমন যে অন্যায় করার চেয়ে অন্যায় সহ্য করা শ্রেয়।
সক্রেটিস দার্শনিক জেনোর মত দ্বান্দ্বিক পদ্ধতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। এই পদ্ধতিতে প্রথমে প্রতিপক্ষের মত স্বীকার করে নেওয়া হয়, কিন্তু এর পর যুক্তির মাধ্যমে সেই মতকে খণ্ডন করা হয়। এই পদ্ধতির একটি প্রধান বাহন হল প্রশ্ন-উত্তর। সক্রেটিস প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমেই দার্শনিক আলোচনা চালিয়ে যেতেন। প্রথমে প্রতিপক্ষের জন্য যুক্তির ফাঁদ পাততেন এবং একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকতেন। যতক্ষণ না প্রতিপক্ষ পরাজিত হয়ে নিজের ভুল স্বীকার করে নেয় ততক্ষণ প্রশ্ন চলতেই থাকত। সক্রেটিসের এই পদ্ধতির অপর নাম সক্রেটিসের শ্লেষ (Socratic irony)।
এছাড়া তিনি তাঁর প্যারাডক্সিকাল বাচনভঙ্গির জন্য বিখ্যাত। উদাহরণস্বরূপ- এক লোক তাকে জিজ্ঞেস করলো, “আপনি কি সক্রেটিস?” সক্রেটিস তখন বললেন, “প্রমাণ করুন যে আমি সক্রেটিস নই!” প্রশ্ন দিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে তিনি পারদর্শী ছিলেন। অনেক বিজ্ঞ ব্যক্তিও তার কথার সামনে বোকা বনে যেত।
খ্রিস্টপূর্ব ৪৭০ সালে প্রাচীন গ্রিসে তাঁর জন্ম হয় এবং খ্রিস্টপূর্ব ৩৯৯ সালে এক প্রহসনের বিচারে হেমলক বিষ পানে তাঁর মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। অবশ্য মৃত্যুর পরে এথেন্স বাসীদের মধ্যে তাঁকে নিয়ে অনেক অনুশোচনা কাজ করেছিল।
তাঁর শিষ্য প্লেটো, সৈনিক জেনোফন প্রমুখদের রচনা থেকে কেবল এই মহান দার্শনিকের সম্পর্কে তথ্য লিখিতভাবে পাওয়া গেছে। সেই চিন্তার এক নতুন জগৎ সৃষ্টি হয়েছিল যা মানুষকে প্রতিনিয়ত উত্তেজিত করে চলেছে আজকের পৃথিবীকে।

 

সক্রেটিস এমন এক দার্শনিক চিন্তাধারা জন্ম দিয়েছেন যা দীর্ঘ ২০০০ বছর ধরে আজো পশ্চিমা সংস্কৃতি, দর্শন ও সভ্যতাকে প্রভাবিত করেছে।

নিম্নে সক্রেটিসের উল্লেখযোগ্য কিছু উক্তি ও বাণী একত্রিত করে তুলে ধরা হল-

১. Know thyself. “নিজেকে জানো।”
২. “জ্ঞানই পুণ্য। ”
৩. “তুমি যা হতে চাও তা-ই হও।”
৪. “পোষাক হলো বাইরের আবরণ , মানুষের আসল সৌন্দর্য হচ্ছে তার জ্ঞান।”
৫. “পৃথিবীতে শুধুমাত্র একটি-ই ভাল আছে, জ্ঞান। আর একটি-ই খারাপ আছে, অজ্ঞতা।”
৬. “বিস্ময় হল জ্ঞানের শুরু।”
৭. “জ্ঞানী শিক্ষকের কাজ হচ্ছে কোনো ব্যক্তিকে প্রশ্ন করে তার কাছ থেকে উত্তর জেনে দেখানো যে জ্ঞানটা তার মধ্যেই ছিল।”
৮. “আমি কাউকে কিছু শিক্ষা দিতে পারব না, আমি শুধু তাদের চিন্তা করাতে পারব।”
৯. “প্রকৃত জ্ঞান নিজেকে জানার মধ্যে, অন্য কিছু জানার মধ্যে নয়।”
১০. “তারা জানে না যে তারা জানে না, আমি জানি যে আমি কিছু জানি না।”
১১. “সত্যিকারের জ্ঞানী হবার প্রক্রিয়াটি তখনই শুরু হবে যখন আপনি জানবেন যে আপনি কিছুই জানেন না।”
১২. “আত্মার উন্নয়ন না করে শারীরিক সুস্থতা অর্থহীন। জ্ঞান চর্চার মাধ্যমে আত্মার উন্নয়ন সাধনই মানুষের প্রথম ও প্রধান কাজ।”
১৩. “তুমি কিছুই জান না এটা জানা-ই জ্ঞানের আসল মানে।”
১৪. “অন্যায় করে লজ্জিত না হওয়াটা আরেক অন্যায়।”
১৫. “বন্ধুত্ব কর ধীরে ধীরে, কিন্তু যখন বন্ধুত্ব হবে এটা দৃঢ় কর এবং স্থায়ী কর।”
১৬. “বন্ধু হচ্ছে দুটি হৃদয়ের একটি অভিন্ন মন।”
১৭. “নারী জগতে বিশৃঙ্খলা ও ভাঙ্গনের সর্বশ্রেষ্ঠ উৎস। সে দাফালি বৃক্ষের ন্যায় যাহা বাহ্যত খুব সুন্দর দেখায়। কিন্তু চড়ুই পাখি ইহা ভক্ষণ করিলে ইহাদের মৃত্যু অনিবার্য।”
১৮. “যাই হোক বিয়ে কর। তোমার স্ত্রী ভাল হলে তুমি হবে সুখী, আর খারাপ হলে হবে দার্শনিক।”
১৯. “টাকার বিনিময়ে শিক্ষা অর্জনের চেয়ে অশিক্ষিত থাকা ভাল।”
২০. “শিক্ষা হ’ল শিখার আগুন জ্বলানো, কোনও পাত্র ভর্তি নয়।”
২১. “অপরীক্ষিত জীবন নিয়ে বেঁচে থাকা গ্লানিকর।”
২২. “মৃত্যুই হল মানুষের জীবনে সর্বাপেক্ষা বড় আশীর্বাদ।”
২৩. “মৃত্যুর চেয়ে কঠিন হচ্ছে জীবন। কেননা দুঃখ-কষ্ট বিপদ আপদ কেবল জীবনেই ভোগ করতে হয় মৃত্যু তা থেকে মুক্তি দেয়।”
২৪. “তরুণদের আরও বেশিবার আয়নায় দেখা উচিত: সুন্দর, যাতে তাদের সৌন্দর্যকে লজ্জিত না করে, কুৎসিত, যাতে শিক্ষার সাথে কুৎসিততা উজ্জ্বল হয়।”
২৫. “সত্যপ্রীতি বিজ্ঞতার লক্ষন।”
২৬. “যে সৎ ব্যক্তি অসৎ ব্যক্তির পিছনে ঘুরে বেড়ায়, সে সত্যিই করুণার পাত্র।”
২৭. “সেই সাহসী যে পালিয়ে না গিয়ে তার দায়িত্বে থাকে এবং শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।”
২৮. “নিজেকে উন্নয়নের জন্য অন্য মানুষের লেখালেখিতে কাজে লাগাও এই জন্য যে অন্য মানুষ কিসের জন্য কঠোর পরিশ্রম করে তা তুমি যাতে সহজেই বুঝতে পার।”
২৯. “সুখ্যাতি অর্জনের উপায় হল তুমি কি হিসেবে আবির্ভূত হতে চাও তার উপক্রম হওয়া।”
৩০. “শক্ত মন আলোচনা করে ধারনা নিয়ে, গড়পড়তা মন আলোচনা করে ঘটনা নিয়ে, দুর্বল মন আলোচনা করে মানুষ নিয়ে।”
৩১. “কঠিন যুদ্ধেও সবার প্রতি দয়ালু হও।”
৩২. “নিজেকে খুঁজে পেতে, নিজের জন্য চিন্তা করুন।”
৩৩. “ব্যস্ত জীবনের অনুর্বরতা সম্পর্কে সতর্ক থাকুন।”
৩০. “ যার টাকা আছে তার কাছে আইন খোলা আকাশের মত, আর যার টাকা নেই তার কাছে আইন মাকড়সার জালের মত! ”
৩১. “আমাদের প্রার্থনা হওয়া উচিত সাধারণের ভালোর জন্য। শুধু ঈশ্বরই জানেন কিসে আমাদের ভাল।”
৩২. “মিথ্যা কথাগুলি কেবল নিজের মধ্যেই মন্দ নয়, তারা আত্মাকে মন্দ দ্বারা সংক্রামিত করে।”
৩৩. “জীবন নয়, বরং ভাল জীবনই মূলত মূল্যবান হয়।”
৩৪. “গভীর আকাঙ্ক্ষা থেকে প্রায়শই মারাত্মক ঘৃণা আসে।”
৩৫. “একটি ভাল খ্যাতি অর্জনের উপায় হ’ল আপনি যা দেখতে চান তা হওয়ার চেষ্টা করা।”
৩৬. “শৈশবে লজ্জা, যৌবনে ভারসাম্য এবং বার্ধক্যে ব্যয়সংকোচন ও দুরদর্শিতার প্রয়োজন।”
৩৭. “যৌবনকালে অর্ধেক খাও, আর অর্ধেক সঞ্চয় কর। যৌবনের সঞ্চয় বৃদ্ধকালের অবলম্বন।”
৩৮. “সত্যিকারের জ্ঞান আমাদের সবার কাছেই আসে, যখন আমরা বুঝতে পারি যে আমরা আমাদের জীবন, আমাদের নিজেদের সম্পর্কে এবং আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে তার সম্পর্কে কত কম জানি।”
৩৯. “সামান্য পাগলামির ছোঁয়া না থাকলে শ্রেষ্ঠ প্রতিভাবান হওয়া যায়না।”
৪০. “সমালোচনা এড়ানোর পথ হলো- কিছু বলোনা, কিছু করোনা, কিছুতে থেকোনা।”
৪১. “আশা হলো জেগে স্বপ্ন দেখার মতো।”
৪২. “জ্ঞানী মানুষরা কখনো সুখের সন্ধান করে না বরঞ্চ দুঃখ-যন্ত্রণার হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করে।”
৪৩. “একজন সৎ মানুষ সর্বদা একজন শিশুর মতো হয়।”
৪৪. “আমি কাউকে কিছুই শেখাতে পারিনা, আমি শুধু তাদের চিন্তা করতে শেখাই।”
৪৫. “সেই ব্যাক্তি সবচেয়ে ধনী জিনি অল্পে সন্তুষ্ট থাকেন এবং প্রকৃতির সম্পদের মাঝে ঐশ্বর্য খুঁজে পান।”
৪৬. “সাফল্যের রহস্য হলো এমন কিছু জানা যা অন্যের অজানা।”
৪৭. “অর্থ হতে সদগুণ জন্মে না বরং অর্থ ও অন্যান্য কাম্য বিষয় সদগুণ থেকেই গ্রহণ করে।”
৪৮. “সূর্যের একটি ত্রুটি রয়েছে: এটি নিজেকে দেখতে পারে না।”
৪৯. “আমি হলাম জীবিত বিজ্ঞতম ব্যক্তিটি, এজন্য আমি একটি জিনিষ জানি, এবং তা হল যে আমি কিছুই জানি না।”
৫০. “আমাদের প্রবল ইচ্ছা পূরণ করা প্রায়ই আমাদের সবচেয়ে বড় দু:খের উৎস।”

Sharing is caring!

Shajahan Manik

ইংরেজি প্রভাষক শাহ্জাহান মানিক একাধারে কবি, লেখক, গবেষক ও অনুবাদক। একাধিক কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও তার অনুদিত বইয়ের সংখ্যা ১০টি। এছাড়া সায়েন্স ফিকশন, সম্পাদনা, ছোটদের বইয়ের পাশাপাশি তার রয়েছে ইংরেজি শেখার বই। তার সর্বশেষ প্রকাশিত গ্রন্থ হচ্ছে- মানব কল্যাণে মুসলিম বিজ্ঞানীদের অবদান।

https://besorgo.com

2 thoughts on “সক্রেটিসের কিছু বিখ্যাত জ্ঞানমূলক বাণী ও দার্শনিক উক্তি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *