মার্ক টোয়েন

মার্ক টোয়েন: জীবন যার এক ক্লাসিক উপন্যাস

জীবনী নির্বাচিত পোস্ট
স্যামুয়েল ল্যাংহর্ণ ক্লিমেন্স- মার্কিন এই সাহিত্যিক, রম্য লেখক ও প্রভাষক বিশ্ব জুড়ে মার্ক টোয়েন নামেই বেশি খ্যাত। “মার্ক টোয়েন”- কথাটির অর্থ হচ্ছে “নিরাপদ জলপ্রবাহ”।
৩ ফেব্রুয়ারী ১৮৬৩ তারিখে প্রকাশিত Letter From Carson – re: Joe Goodman; party at Gov. Johnson’s; music  নামের একটি রম্য রচনাতে ক্লিমেন্স প্রথম তাঁর এই ছদ্মনাম প্রথম স্বাক্ষর করেন। আজ কালের পরিক্রমায় যা তাঁর আসল নামের গন্ডীকে অতিক্রম করে বিশ্ববাসীর কাছে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে দীপ্যমান। নাম থেকেই বুঝা যায় ছোটকাল হতে এই মহান সাহিত্যিকের নদী, নৌকা ও স্টিমারের প্রতি ছিল প্রবল ঝোঁক। তাইতো The Adventures of Tom Sawyer; The Adventures of Huckleberry Finn– এর মতো বিশ্ব সাহিত্যের অমর কিশোর ক্লাসিকগুলোতে যেন তাঁর নিজের কিশোর জীবনের দূরন্তপনাই ফুটে উঠেছে।
আমেরিকার ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের মিসৌরিতে ১৮৩৫ সালের ৩০ নভেম্বর তাঁর জন্ম। নদী তীরবর্তী ছোট শহর হ্যানিবল্-এ তাঁর শৈশব কেটেছে। তাঁর জীবন বৈচিত্র্যতায় পূর্ণ। কখনও ছাপাখানার শিক্ষানবীশ, কখনও মিসিসিপি নদীতে স্টিমারের পাইলট, কখনও নেভাদার দূর্গম অঞ্চলে খনি সন্ধানী, কখনওবা সংবাদপত্রের রিপোর্টার, কখনও ক্যালিফোর্নিয়ার অভিজাত শ্রেণির সঙ্গলাভ- যার সবকিছু ছিল তার সাহিত্য সৃষ্টির পাথেয়। তিনি ছিলেন একাধারে অসংখ্য রাষ্ট্র প্রধানের বন্ধু, সহচর, বিশ্ব-পর্যটক, খ্যাতিমান গল্পকার, বাগ্নী, কৌতুকাভিনেতা, প্রেমিক স্বামী ও স্নেহময় পিতা।
তাঁর সাহিত্য সৃষ্টি সম্পর্কে বলতে গিয়ে বিশ্ববিখ্যাত নোবেল বিজয়ী লেখক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে বলেছেন- “হাক্লেবেরি ফিন- থেকেই মার্কিন সাহিত্যের যাত্রা শুরু।” আর এ মন্তব্য থেকে বুঝা যায় যে আমেরিকান সাহিত্যে তাঁর প্রভাব কতো বিশাল। তাঁর জীবদ্দশায় সম্ভবত সমগ্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তিনিই ছিলেন সবচাইতে জনপ্রিয় তারকা। মার্ক টোয়েইন সম্বন্ধে মার্কিন গ্রন্থকার উইলিয়াম ফকনার তার বক্তব্যে নির্দিধায় বলেছেন, “টোয়েইন ছিলেন প্রথম এবং প্রকৃত আমেরিকান লেখক, তার পরের আমরা সকলেই তাঁর উত্তরাধিকারী।”
১৮৬৫ সালে তাঁর কৌতুকপূর্ণ গল্প The Celebrated Jumping Frog of Calaveras County  প্রকাশিত হয়। হাস্যরসে ভরা এ ছোট গল্পটি তৎকালীন সময়ে তাঁকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দেয়। এমনকি গ্রীক ক্লাসিক হিসেবে অনুদিত হয় তাঁর এ ছোট গল্পটি।
টোয়েইনের জন্ম হয়েছিলো পৃথিবীর আকাশে হ্যালির ধূমকেতু আবির্ভাবের ঠিক কিছুদিন পরেই। জীবদ্দশায় তিনি ধারণা করতেন আবার হ্যালির ধূমকেতুর আগমনের সাথে সাথেই তিনি পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবেন। এ নিয়ে ১৯০৯ সালে তিনি তাঁর এক বক্তব্যে বলেন: ১৮৩৫ সালে হ্যালির ধূমকেতুর সাথেই আমি পৃথিবীতে এসেছিলাম। আগামী বছর এটি আবার আসছে, এবং আমি আশা করি এর সাথেই আমি আবার চলে যাবো। হ্যালির ধূমকেতুর সাথে সাথেই যদি আমার প্রস্থান না ঘটে তাহলে এটি হবে আমার জীবনের সবচে বড় হতাশাপূর্ণ ঘটনা। কোন সন্দেহ নেই যে স্রষ্টা বলেছিলেন: “এই হলো দুই দায়িত্বজ্ঞানহীন উন্মাদ; এরা এসেছিলো একসাথে, এদের যেতেও হবে একসাথে।”
অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে তাঁর সেই ভবিষ্যদ্বাণী অক্ষরে অক্ষরে ফলে গিয়েছিলো। টোয়েইন হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে রীডিং, কানেকটিকাট শহরে মৃত্যুবরণ করেন। আর সে দিনটি ছিলো হ্যালির ধূমকেতু পৃথিবীর সাথে সবচেয়ে কাছাকাছি দূরত্বে অবস্থান করার ঠিক পরের দিন। এই মহান কথাশিল্পী- যাকে আমেরিকান সাহিত্যের তিলক বলা হয়ে থাকে, ৭৪ বছর বয়সে ৫০ বছর সাহিত্যসেবা শেষে ১৯১০ সালের ২১ এপ্রিল মৃত্যু বরণ করেন।
টোয়েইনের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম হাওয়ার্ড  ট্যাফ্ট বলেছিলেন:
“মার্ক টোয়েইন অজস্র মানুষকে বুদ্ধিদীপ্ত আনন্দ দান করে গেছেন এবং তাঁর সৃষ্টিকর্ম অনাগত অসংখ্য মানুষকেও ভবিষ্যতে আনন্দ দান করে যেতে থাকবে… তিনি আমেরিকান রম্য করতেন, কিন্তু ইংরেজরা সহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মানুষজনও তাঁর নিজ দেশের মানুষের মতোই তাঁর কাজের প্রশংসা করেছেন। তিনি আমেরিকান সাহিত্যের একটি চিরস্থায়ী অংশ।”
টোয়েইনকে অভিহিত করা হতো তাঁর সময়ের সর্বশ্রেষ্ঠ রম্যকার হিসেবে। এবং উইলিয়াম ফকনার টোয়েইনকে তাই আখ্যায়িত করেছেন- আমেরিকান সাহিত্যের জনক হিসেবে।

Sharing is caring!

Shajahan Manik

ইংরেজি প্রভাষক শাহ্জাহান মানিক একাধারে কবি, লেখক, গবেষক ও অনুবাদক। একাধিক কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও তার অনুদিত বইয়ের সংখ্যা ১০টি। এছাড়া সায়েন্স ফিকশন, সম্পাদনা, ছোটদের বইয়ের পাশাপাশি তার রয়েছে ইংরেজি শেখার বই। তার সর্বশেষ প্রকাশিত গ্রন্থ হচ্ছে- মানব কল্যাণে মুসলিম বিজ্ঞানীদের অবদান।

https://besorgo.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *