মহাবিশ্ব কতোটা বড়? তার শেষ সীমা কোথায়?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে আগে আমাদের মহাবিশ্ব সম্পর্কে জানতে হবে। আর মহাবিশ্ব বা বিশ্ব ব্রহ্মান্ড ও সৃষ্টি জগৎ সম্পর্কে কিছু ধারনা পেতে চাইলে আমাদের ছায়াপথ এর বিষয়ে একটা ধারণা থাকা দরকার। তারপর আমরা বুঝতে সামর্থ হবো যে মহাকাশের / মহাবিশ্ব ও তার শেষ সীমায় পৌঁছা আদৌ সম্ভব কিনা! আমাদের প্রথমেই স্মরণে রাখতে হবে যে ছায়াপথ আমাদের কল্পনার চেয়েও অনেক অনেক গুন বড়, বিশাল ও প্রসারিত।
আমাদের নিজেদের ছায়াপথের নাম ‘মিল্কি ওয়ে গ্যলাক্সি’ বা আকাশ গঙ্গা
চাঁদহীন মেঘমুক্ত সন্ধ্যার আকাশের দিকে তাকালে আমরা আকাশের বুক চিরে উত্তর থেকে দক্ষিণে নক্ষত্রদের মধ্যে দিয়ে একটা ভাসমান পেঁজা তুলো বা আবছা সাদা মেঘের মত আলোর পটির অস্তিত্ব আমরা খুঁজে পাবো। ওটাই আমাদের ছায়া পথ যাকে ইংরেজিতে ‘মিল্কি ওয়ে’ আর বাংলায় ‘আকাশ গঙ্গা’ নামে ডাকা হয়।
আমাদের আবাসভূমি পৃথিবী নামক গ্রহটা এই মিল্কিওয়ে নামক বিশাল ছায়াপথের অন্তর্ভুক্ত ছোট্ট সৌরজগতের অতি ক্ষুদ্র একটি গ্রহ। আর সমগ্র সৌরজগত ছায়াপথ এর একটি ক্ষুদ্র অংশ। একাধিক গ্রহ নিয়ে যেমন সৌরজগত গড়ে ওঠে তেমনি অসংখ্য সৌরজগত মিলে গঠিত হয় ছায়াপথ। সাধারণত একটি ছায়াপথ আমাদের সুর্যের চেয়েও বড় বড় অসংখ্য তারকা, নক্ষত্র, নীহারিকা, সৌরজগত ও মহাজাগতিক বস্তুর সমন্বয়ে গড়ে ওঠে। একটি আদর্শ ছায়াপথে ১ কোটি থেকে এক লক্ষ কোটি তারকা থাকতে পারে।
ইংরেজিতে ছায়াপথ-কে বলা হয় Galaxy. আমাদের সৌরজগত Milky Way Galaxy তে অবস্থিত। ১৬১০ সালে বিজ্ঞানী গ্যালিলিও প্রথম দূরবীণের সাহায্যে লক্ষ্য করে বুঝতে পারেন যে আকাশ গঙ্গা আসলে অসংখ্য নক্ষত্রের সমাহার। তিনি অনুধাবন করেন আকাশের এই অতি উজ্জ্বল আলোর রেখাটি মূলত অগুণিত তারার সমষ্টি।
মূলত তিনিই ছায়াপথ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেন। মহাবিশ্বে এমন অগণিত Galaxy বা ছায়াপথ রয়েছে।
যেমন:
Andromeda Galaxy,
Canis Major Dwarf Galaxy,
Cygnus A,
Maffei I and II,
Magellanic Clouds,
Virgo A, ইত্যাদি।
অতীতে মনে করা হতো আকাশগঙ্গা ছায়াপথ বা মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির বাইরে হয়তো সৃষ্টি জগতে কিচ্ছু নেই। কিন্তু ১৯২৪ সালে মানুষের সেই ধারণা আমুল বদলে যায়। সে বছর এডউইন হাবল কিছু দুরবর্তী নীহারিকা সনাক্তকরণে সক্ষম হন।
পৃথিবী থেকে সে সব নীহারিকার দুরত্ব নির্ণয় করতে গিয়ে বিজ্ঞানী হাবল বুঝতে পারেন, নিসন্দেহে সে সব নীহারিকা আমাদের Galaxy এর অর্ন্তভুক্ত নয়। বরং সেগুলো ছিল মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি থেকে বহুগুণ বড় ও বহু দুরে অবস্থিত।
পৃথিবীর মতো গ্রহ গুলো যেমন সুর্যকে কেন্দ্র করে প্রদক্ষিণ করে তেমনি তেমনি সূর্যের মতো নক্ষত্রগুলো ছায়াপথ এর কেন্দ্রকে ঘিরে আর্বতীত হচ্ছে।
শুধু তাই নয় ছায়াপথ নিজেও মহাবিশ্বে তার নিজস্ব অবস্থান অনুযায়ী ঘুরতে থাকে।
আমাদের এই ছায়াপথ বা তারা-জগতের ১০ হাজার কোটি তারাদের সবাইকে আমরা দেখতে পাই না। গ্যাস ও ধুলোর আড়ালে অসংখ্য গ্রহ-নক্ষত্র লুকিয়ে আছে। ছায়াপথের এই চাকতির ব্যাস প্রায় ১ লক্ষ আলোক-বর্ষ। অর্থাৎ সেকেন্ডে প্রায় ৩ লক্ষ কিলোমিটার বেগে ধাবমান আলো এই তারা-জগৎকে এপার ওপার করতে ১ লক্ষ বছর নেবে। কোন মানুষের পক্ষে কী তা সম্ভব! আমাদের প্রাণদাতা সূর্য এই মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্র থেকে ২৬ হাজার আলোক-বর্ষ দূরে। সে তার সৌরজগতকে নিয়ে সেকেন্ডে ২৪০ কিলোমিটার বেগে সেই কেন্দ্রকে আবর্তন করে চলেছে। একটি পাক সম্পুর্ণ করতে তার সময় লাগে সাড়ে ২২ কোটি বছর।
এরপর ১৯৯৫ সালে হাবল টেলিস্কোপ এর পাঠানো একটি ছবি মানব সভ্যতার মহাকাশ জ্ঞান এবং মহাকাশ গবেষনার ইতিহাস আমূল বদলে দেয়। ‘হাবল ডিপথ ফিল্ড’ নামক সেই ছবিতে পাঁচ হাজার এরও বেশি ছায়াপথ খুঁজে পাওয়া গেছে।
মানুষ সৃষ্টিজগৎ এর যতদুর পর্যন্ত টেলিস্কোপ এর সাহয্যে দেখতে পায়, শুধুমাত্র তার উপর নির্ভর করে ছায়াপথ সম্পর্কে এসব ধারণা প্রকাশ করা হয়েছে।
আধুনিক যন্ত্র দিয়ে মহাজাগতের যতদুর দেখা যায় তাকে বলা হয় Observable Universe বা পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্ব। বিজ্ঞানীদের ধারনা যে পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বে প্রায় ১২ হাজার কোটি Galaxy থাকতে পারে।
আর যেখানে পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্ব শেষ হয়েছে সেই সীমানাকে বলা হচ্ছে Cosmological Horayzon বা মহাজাগতিক দিগন্ত। এই মহাজাগতিক দিগন্তের বাইরে অবশ্যই আরো ছায়াপথ রয়েছে যার সংখ্যা কল্পণা করা মানুষের চিন্তাশক্তির বাইরে। বিজ্ঞানীদের আবিস্কৃত কোন যন্ত্র দিয়ে সেগুলো পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব নয়, এমনকি পর্যবেক্ষণ সীমার মধ্যে থাকা ৯০ শতাংশ ছায়াপথ-ই পর্যবেক্ষন করা বাকি আছে।যা হাবল বা জেমস টেলিস্কোপ এর মতো মত্র ২/৪ টি টেলিস্কোপ এর মাধ্যমে সম্ভব নয়।
এভাবে ছায়াপথ এর এই অপার জগৎ সম্পর্কে যতই গবেষণা হচ্ছে ততই যেন এগুলো আমাদের বোধশক্তির সীমাকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
স্বাভাবিকভাবেই আমাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে আমরা কি কখনও ছায়াপথ পাড়ি দিতে পারবো? নিচের তথ্য আমাদের এর উত্তর খুঁজে পেতে সাহায্য করবে।
1 thought on “মহাবিশ্ব ও তার শেষ সীমা”