ওটা কিছু নয় _ নির্মলেন্দু গুণ

ওটা কিছু নয় : নির্মলেন্দু গুণ

কবিতা

ওটা কিছু নয়

–নির্মলেন্দু গুণ

এইবার হাত দাও, টের পাচ্ছো আমার অস্তিত্ব? পাচ্ছো না ?
একটু দাঁড়াও আমি তৈরী হয়ে নিই ।
এইবার হাত দাও, টের পাচ্ছো আমার অস্তিত্ব? পাচ্ছো না ?
তেমার জন্মান্ধ চোখে শুধু ভুল অন্ধকার । ওটা নয়, ওটা চুল ।
এই হলো আমার আঙ্গুল, এইবার স্পর্শ করো,–না, না, না,
-ওটা নয়, ওটা কণ্ঠনালী, গরলবিশ্বাসী এক শিল্পীর
মাটির ভাস্কর্য, ওটা অগ্নি নয়, অই আমি–আমার যৌবন ।

সুখের সামান্য নিচে কেটে ফেলা যন্ত্রণার কবন্ধ–প্রেমিক,
ওখানে কী খোঁজ তুমি? ওটা কিছু নয়, ওটা দুঃখ;
রমণীর ভালোবাসা না-পাওয়ার চিহ্ন বুকে নিয়ে ওটা নদী,
নীল হয়ে জমে আছে ঘাসে, –এর ঠিক ডানপাশে, অইখানে
হাত দাও, হ্যাঁ, ওটা বুক, অইখানে হাতা রাখো, ওটাই হৃদয়।

অইখানে থাকে প্রেম, থাকে স্মৃতি, থাকে সুখ, প্রেমের সিম্পনি ;
অই বুকে প্রেম ছিল, স্মৃতি ছিল, সব ছিল তুমিই থাকো নি।

 

কবি পরিচিতি :
বাংলাদেশের জনপ্রিয় কবিদের অন্যতম নির্মলেন্দু গুণ ১৯৪৫ সালের ২১ জুন নেত্রকোণার বারহাট্টার কাশবন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। স্বাধীনতার পূর্বে তিনি সমাজতান্ত্রিক রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। কিছুদিন সাংবাদিকতায়ও জড়িত ছিলেন। ১৯৭০ সালে প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রেমাংশুর রক্ত চাই প্রকাশিত হবার পর ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এ-গ্রন্থের অন্তর্ভূত ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে লেখা হুলিয়া কবিতাটি আজ অব্দি জনপ্রিয়। শ্রেণীসংগ্রাম, স্বৈরাচার-বিরোধিতা, প্রেম ও নারী তার কবিতার মূল-বিষয় হিসেবে বার বার এসেছে। কবিতার পাশাপাশি ভ্রমণ কাহিনীও লিখেছেন। তার বহুল আবৃত্ত কবিতাসমূহের মধ্যে – হুলিয়া, অসমাপ্ত কবিতা, মানুষ (১৯৭০ প্রেমাংশুর রক্ত চাই), আফ্রিকার প্রেমের কবিতা (১৯৮৬ নিরঞ্জনের পৃথিবী) – ইত্যাদি অন্যতম। তিনি ১৯৮২ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ২০০১ সালে একুশে পদক এবং ২০১৬ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন।

Sharing is caring!

Besogo Editor

বাংলাভাষী পাঠকের ব্যস্ত দৈনন্দিন জীবনকে আরো বেশি উপভোগ্য, ছন্দময় ও জ্ঞাত করার প্রয়াসে বিসর্গ নামক এই বাংলা পোর্টালের সৃষ্টি। কৃতজ্ঞতার সাথে বিসর্গ টিম সকল লেখক ও কন্ট্রিবিউটরের অবদান স্মরণ করে। বিশেষ করে উপরের সংগৃহিত পোস্টটির জন্য লেখক সহ সকলের কাছে বিসর্গ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *