কিচেন টিপস

কিচেন টিপস: রান্না ও রান্নাঘর সামলানোর প্রয়োজনীয় ৩০টি কিচেন টিপস

জানা অজানা নির্বাচিত পোস্ট লাইফস্টাইল

কিছু কিচেন টিপস আছে যা জানলে এই নাগরিক জীবনের শত ব্যস্ততার মাঝেও রান্না ও রান্নাঘরকে আমাদের সহজে সামলানো সম্ভব। আর রান্নাঘর হচ্ছে একটি বাড়ির সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত স্থান। আমাদের বাড়ির এটি এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই সহজে ও স্মার্টলি এক সামলানো গেলে আমাদের লাইফস্টাইলও হবে উন্নত।

আমরা জানি আমাদের শরীরের যাবতীয় এনার্জি আসে খাবার থেকে। আর প্রতিদিন আমাদের চলার শক্তি প্রয়েজনীয় সব খাবার তৈরি হয় রান্নাঘরে। প্রতিদিনই রাঁধুনীদের এই রহস্যময় রান্নাঘরে নানা ঝামেলায় পড়তে হয়। কিন্তু সামান্য কিছু কিচেন টিপস ফলো করে এই ঝামেলা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। তাই কাজের ব্যস্ততার মাঝেও কিভাবে আপনি আপনার রান্না ও রান্নাঘরকে সামলাবেন তা আজ আমরা জানবো।

 

আমাদের রান্নাঘরে প্রতিদিন কতো পদের সুস্বাদু খাবার তৈরি হয় তার হিসেব কে রাখে! আর আমাদের রসনা বিলাস যতোটা সহজে হয়, রান্নাঘরে রান্না করা কিন্তু ঠিক ততোটা কঠিন।

নিচের প্রয়োজনীয় ৩০টি কিচেন টিপস আপনার রান্না ও রান্নাঘরকে আরো সহজে সামলাতে সাহায্য করবে-

১. রান্না করার সময় যদি তরকারিতে লবন বেশি হয়ে তাহলে এক টুকরো আলু ছেড়ে দিন। এই আলু তরকারির অতিরিক্ত লবন শোষে নেবে।
অথবা অল্প তেলে কুচানো কিছু পেঁয়াজ ভেজে তরকারির সাথে মিশিয়ে চুলার অল্প আচে ৪/৫মিনিট দমে রেখে দিলে তরকারির লবন কমে যাবে। এছাড়াও টমেটো কুচি করে তরকারিতে ছড়িয়ে দিলেও তরকারির লবন কমে যায়।
২. রান্না করা তরকারিতে বেশি হলুদ হয়ে গেলে সুপারি ছেড়ে দিন হলুদ ভাব কমে যাবে।
৩. তরকারিতে বেশি তেল দিয়ে ফেলাটা খুব সাধারন একটি ঘটনা। সমস্যা নেই! তরকারি ঠান্ডা হলে তাতে কয়েক টুকরো বরফ ছেড়ে দিন। বরফ অতিরিক্ত তেল শোষে নিবে। সাথে সাথে বরফগুলো উঠিয়ে ফেলে দিন।
৪. আলু সেদ্ধ করার সময় সাথে এক চিমটি লবন দিলে আলুর খোসা সহজেই তুলতে পারবেন।
৫. মাছ ভাজার সময় গরম তেল ছিটা একটি বিরক্তিকর ব্যাপার। তেল ছিটা রোধ করতে গরম তেলে একটু লবন ছড়িয়ে দিন।
৬. ভাত সুন্দর ও ঝরঝরে করতে চাইলে চাল ধোয়ার পর ১০ মিনিট রেখে দিয়ে তারপর রান্না করুন। অথবা রান্নার সময় ১চা চামচ রান্নার তেল দিন। দেখবেন ভাত সুন্দর ঝরঝরে হয়েছে।
৭. সবুজ সবজি রান্নার সময় সবুজ রং ঠিক রাখতে এক চিমটি চিনি দিন।
৮. অনেকসময় পাকা টমেটো ঘরে রাখলে নরম হয়ে যায়। নরম টমেটোকে শক্ত করতে চাইলে কিছু সময় লবন পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। দেখবেন টমেটো শক্ত হয়ে উঠেছে।
৯. কচু শাক অথবা কচু রান্না করলে তাতে কিছুটা টক দিলে খাওয়ার সময় গলা চুলকানোর ভয় থাকবে না।
১০.পরোটা নরম রাখার জন্য ময়দা গরম পানি বা টক দই দিয়ে মাখিয়ে পাতলা কাপড় দিয়ে কিছুক্ষণ জড়িয়ে রাখুন। পরোটা খুব সুন্দর নরম ও মজাদার হবে।
১১. আপেল কাটার পর দ্রুত তা লালচে হয়ে যায়। অতিথির সামনে তা পরিবেশনকালে বিব্রত হতে হয়। কাটা আপেলের উপর হালকা করে লেবুর রস লাগিয়ে দিন। আপেল লালচে হবে না। বরং ফ্রেশ দেখাবে।
১২. পায়েস বা ক্ষীর ঘন করতে রান্নার সময় সামান্য পরিমাণে চালের গুড়া ঠান্ডা দুধের সাথে মিশিয়ে ব্যাবহার করুন।
১৩. অনেক সময় কাজুবাদামের খোসা সহজে ছাড়ানো যায় না। তখন বাদামগুলোকে গরম পানিতে অন্তত ১৫-২০ মিনিট ডুবিয়ে রাখুন। খোসা নরম হয়ে সহজেই উঠে আসবে।
১৪. পেঁয়াজু মুচমুচে রাখতে চাইলে ডাল মিহি করে না বেটে বরং আধভাঙ্গা করে ডাল বাটুন বা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করুন। কেননা ডাল মিহি করে পেস্ট করলে পেঁয়াজু নরম হয়ে যায়। তেমনি পেঁয়াজু কাটলেট পাকোড়া সহ এ ধরনের খাবার তৈরিতে ময়দার পরিবর্তে ব্যবহার করুন চালের গুঁড়ো। এতে তেল যেমন কম শোষণ হবে তেমনি পেঁয়াজু হবে মচমচে।
১৫. ভাত বা ডাল উছলে বাইরে পড়ার আগেই কাঠের একটি চামচ দিয়ে রাখুন হাড়ির ওপর। দেখবেন উছলে পড়বে না। তেমনি দুধ জ্বাল দেওয়ার সময় হাঁড়ির চারপাশে সামান্য তেল মেখে নিলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। তবে অবশ্যই উচ্চতাপে দেওয়া যাবে না দুধ। মাঝারি আঁচে রাখতে হবে।

 

৩০টি কিচেন টিপস
রান্না ও রান্নাঘর সামলানোর প্রয়োজনীয় ৩০টি কিচেন টিপস
১৬. মধু আসল কিংবা নকল তা জানতে এক টুকরো সাদা কাপড় নিন। এবং তাতে মধু মেখে আধাঘন্টা রেখে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। যদি ধোয়ার পর কাপড়ে দাগ থেকে যায় তাহলে বুঝবেন মধুটা ভেজাল।
১৭. জিরা ফ্রেশ রাখতে চাইলে জিরাগুলোকে এলুমিনিয়াম ফয়েল পেপারে মুড়িয়ে ফ্রিজের এক কোণায় রেখে দিন। দীর্ঘদিন তা ফ্রেশ থাকবে।
১৮. চিনির বয়ামে পিঁপড়ের আক্রমণ খুবই সাধারণ একটি বিষয়। বিরক্তিকর এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে বয়াম এর মুখ খুলে চিনির উপর ৩-৪ টি লবঙ্গ রেখে দিন। দশ হাত দূরে থাকবে পিঁপড়ে।
১৯. আলু আর পেঁয়াজ এক সাথে স্টোর করলে তা দ্রুত নষ্ট হয়। তাই এ দু’টো অলাদা আলাদা স্টোর করুন।
২০. পেয়াজঁ দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করতে চাইলে পেঁয়াজের খোসা ছাড়িয়ে পত্রিকা দিয়ে মুড়ে রাখুন। ভালো থাকবে।
২১. রান্নাঘরে খুব তেলাপোকার উপদ্রপ? রান্না ঘরের সিংকের নিচে এবং কোণাগুলোতে বোরিক পাউডার ছড়িয়ে দিন। তেলাপোকা রান্নাঘর তো বটেই, বাড়ি ছেড়ে পালাবে।
২২. চাউলে যাতে পোকা না ধরে, এজন্য কয়েকটা নিম পাতা চালের পাত্রে রেখে দিন। পোকা থাকবে দূরে।
২৩. আচারে ফাংগাস পড়া খুব সাধারণ ঘটনা। আচারের বয়ামে আচার ভরার আগে বয়ামের একদম নিচে এবং আচার ভরার পর আচারের উপরে এক চিমটি করে লবন দিন। আচারে আর ফাংগাস পড়বে না।
২৪. বিস্কুটের বয়ামের নিচে এক টুকরো ব্লটিং পেপার রাখলে সেই বয়ামে রাখা বিস্কুট সহজে নষ্ট হবে না। বরং সেগুলো শুষ্ক ও মচমচে থাকবে অনেক দিন।
২৫. বাসনের বসে যাওয়া দাগ দূর করতে টুথপেস্ট ব্যবহার করুন। ম্যাজিকের মতো কাজ হবে।
২৬. পাতিলে খাবারের পোড়া দাগ লেগে গেলে অনেক সময় শত ঘষেও তোলা যায় না। এক্ষেত্রে কী অল্প কিছু পেঁয়াজ কেটে নিন। এরপর খাবার পোড়া পাতিলে গরম পানি ঢেলে তাতে পেঁয়াজ কুচি রেখে ৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর পরিষ্কার করুন। দেখবেন পোড়া দাগ উঠে গেছে।
অথবা পোড়া পাত্রটিকে লবন পানিতে ভর্তি করুন। তারপর চুলায় বসান। পানি ফুটতে শুরু করলেই পোড়া অংশ আলগা হয়ে উঠে আসবে।
২৭. ঘি দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করতে চাইলে সামান্য লবন মিশিয়ে রাখুন। অনেক দিন পর্যন্ত ভালো থাকবে।
২৮. ফ্রিজের বাজে গন্ধ দূর করতে এক টুকরো লেবু কেটে ফ্রিজে রেখে দিন। বাজে গন্ধটা দূর করে ফ্রিজে ভালো গন্ধ ছড়াবে। অথবা ফ্রিজের ভিতরে ছোট একটা বাটিতে ভিনেগার রেখে দিন। ফ্রিজের বাজে গন্ধ দূর হবে।
২৯. রান্নাঘরে ভ্যাপসা গন্ধ করলে লেবু বা কমলার খোসা পানিতে জ্বাল দিন। সাথে যোগ করুন কয়েক টুকরো দারচিনি। পানি ফুটতে শুরু করেলেই দেখবেন দারুণ সুগন্ধ ছড়াচ্ছে। রান্নাঘরকে সতেজ রাখতে খুব কার্যকর এটি।
৩০. কখনও শরীরের কোথাও পুড়ে গেলে দ্রুত সেখানে অনেকক্ষণ ধরে ঠান্ডা পানি ঢালুন। এরপর পাকা কলা চ্যাপ্টা করে পোড়া স্থানে তা দিয়ে প্রলেপ দিন। জ্বালা-পোড়া কমে যাবে।
আশাকরি উপরের প্রয়োজনীয় কিচেন টিপসগুলো আপনার রান্না ও রান্নাঘরকে আরো সহজে সামলাতে কাজে আসবে। সবার জন্য রইল শুভ কামনা।

Sharing is caring!

Nusrat Tarannum Mouni

নুসরাত তারান্নুম মৌনী বি‌ভিন্ন ব্লগ ও লিটলম্যা‌গে লেখা‌লে‌খির সা‌থে সম্পৃক্ত। পেশাগত জীবনে গ্রামীণ ফোন সহ বিভিন্ন সুনামধন্য প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। পাবলিক রিলেশন এক্সপার্ট। বাঙালী ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। খাদ্য, পুষ্ঠি ও ডায়েট নিয়ে পড়াশুনার পাশাপাশি এ নিয়ে নিয়মিত প্রবন্ধ লিখেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *