ছোটবেলা থেকেই সবাই শুনে আসছি - ছাত্রনং অধ্যয়নং তপঃ। কিন্তু শুধু অধ্যয়ন করলেই কি ভালো রেজাল্ট করা সম্ভব!
যুগের চাহিদায় আজ ছাত্র জীবনের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে পরিক্ষায় ভালো রেজাল্ট করা। আর ভালো রেজাল্ট করার জন্য যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বই নিয়ে পড়া বা অধ্যয়নে থাকতেই হবে তাও ঠিক না।
মেধার পাশাপাশি কিছু অভ্যাসের চর্চা ও বুদ্ধিদীপ্ত পড়াশোনাই কেবল পারে ভালো ফলাফল এনে দিতে। সেইসাথে পড়াশোনা করার সঠিক নিয়ম ও উপায়গুলো আমাদের জানা থাকা দরকার।
আর কি কৌশলে পড়াশোনা করলে কম পড়ে ভালো রেজাল্ট করা যাবে সে বিষয়ে কিছু নিঞ্জা টেকনিক এই প্রবন্ধে আলোচনা করা হলো-
১. বিষয়ের গুরুত্বপূর্ণ টপিক গুলো নোট করা
কম পড়ে ভালো রেজাল্ট করার একটি কার্যকরী উপায় হচ্ছে কোন বিষয়ের গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলোর একটি নোট করে ফেলা। বিগত সালে পরিক্ষায় যে প্রশ্নগুলো এসেছিল তা কোন অধ্যায় থেকে বেশি করা হয়েছে সেই অধ্যাগুলোর উপর বেশি ফোকাস দিতে পারো। বিগত সালে আসা অধ্যায়গুলোর প্রশ্নগুলো সর্বপ্রথম নোট করার পরে একটা নির্দিষ্ট সময়ে সেগুলো পড়ে শেষ করে ফেলতে হবে। এ বিষয়ে অভিজ্ঞ শিক্ষকের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে।
তাছাড়া কম পড়ে ভালো রেজাল্ট করার গুরুত্বপূর্ণ একটি নিঞ্জা টেকনিক হচ্ছে বিগত বছরে যে প্রশ্নগুলো বিভিন্ন বোর্ড পরিক্ষায় এসেছে সেগুলো বেশি বেশি করে সমাধান করা। এ পদ্ধতিতে দেখা গেছে কখনও কখনও ৬০%- ৭০% কমন পড়ে যায়।
২. তোতা পাখির মতো না বুঝে মুখস্থ না করে বুঝে পড়ার অভ্যাস করতে হবে
অনেকেই আছে কিছু বুঝোক আর না বুঝোক সবকিছু মুখস্থ করে ফেলে। তারা পাঠ বা বিষয় বুঝে পড়ার চেষ্টা করে না। ফলে দেখা যায় পরিক্ষার হলে উত্তর লিখার সময কোনো একটা টপিকের প্রথম কিছু লাইন মনে থাকে আর বাকীগুলো ভুলে যায়। তখন নিজ থেকে আর কিছু লিখতে পারে না। কিন্তু যারা বুঝে বুঝে পাঠ পড়ে তারা তখন বাকীটা নিজেদের মতো করে পরিক্ষায় সম্পূর্ণ উত্তর লিখতে পারে। তাই ভালো রেজাল্ট করার জন্য বুঝে পড়ার কোনো বিকল্প নেই।
৩. একটানা ৩০ মিনিটের বেশি পড়া নয়
গবেষণা থেকে দেখা গেছে একজন মানুষ গড়পড়তা ২৫-৩০ মিনিট পর্যন্ত কোন বিষয়ে মনোযোগ ধরে রাখতে পারে। আর পড়াশোনা করতে প্রয়োজন গভীর মনোযোগের। তাই একটানা ৩০ মিনিটের বেশি কোন বিষয় পড়া উচিৎ নয়। সময়কে ভাগ করে প্রতি ২৫-৩০ মিনিট পরপর ১০ মিনিট ব্রেক দেয়া উচিত। এভাবে পড়লে একজন শিক্ষার্থীর মনোযোগ ঠিক থাকবে এবং সহজে কোন কিছু ভুলবে না। এই নিঞ্জা টেকনিক অবলম্বন করলে পড়াতে বসার প্রতি আর বিরক্তবোধ আসবে না।
৪. পড়াশনায় নিয়মিত হতে হবে
যারা ভালো রেজাল্ট করে তাদের নিয়ে গবেষণা করলে দেখা যাবে তাদের অন্যতম বৈশিষ্ট হচ্ছে তারা পড়া-লেখায় খুবই নিয়মিত।
আমরা মনে করি, ভালো ছাত্ররা বোধ হয় খুব পড়াশোনা করে। আসলে তা নয়! প্রকৃতপক্ষে তারা তাদের পড়াশুনায় খুব নিয়মিত। একটা উদাহরণ দেয়া যাক। কেউ যদি প্রতিদিন রাতে দুই ঘন্টা করে পড়াশোনা করে তাহলে বছরে তার মোট পড়াশুনার সময় দাড়ায় (৩৬৫*২) মোট ৭৩০ ঘন্টা। যা অনেকেই করে না।
বেশিরভাগ ছাত্ররা ভাবে সময়তো আছে কাল থেকে পড়া শুরু করবো। আজ না হয় বিশ্রাম করা যাক! তার পরের দিন ভাবে,আরো তো দিন আছে। এভাবে পরিক্ষার শেষ সময় এসে ভাবে বিকালে করা যাবে। আর যখনই বিকাল আসে তখন বলে, হায় হায়! আর মাত্র কয়েক ঘন্টা বাকি। এখন কী করা? তখন শর্টকার্ট পদ্ধতি খুঁজতে থাকে সবাই। কিন্তু নিয়মিত থাকলে এ সমস্যায় পড়তে হবে না। নিয়মিত পড়াশোনার অভ্যাস ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার চাপ অনেকাংশে কমিয়ে দেয়। তাই কেউ চাইলে নিয়মিত পড়াশোনা করে অনেক কম পরিশ্রম ও পড়াশোনা করে ভালো রেজাল্ট করতে পারে।
৫. ভালো রেজাল্ট করার জন্য একটি রুটিন তৈরি করা জরুরি
ভালো রেজাল্ট করার জন্য পড়াশনায় নিয়মিত হতে চাইলে অবশ্যই একটা রুটিন মেনে পড়াশুনা করতে হবে। আমাদের যদি একটি ভালো পড়ার রুটিন থাকে তাহলে দেখা যায় সেটা আমাদের প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে পড়াতে বসার কথা মনে করিয়ে দেয়। প্রতিদিন নিয়ম করে পড়াশোনার অভ্যাসটা গড়ে তুলতে চাইলে রুটিন মেনে টলার বিকল্প নেই। তাই ভালো রেজাল্ট করা জন্য একটি ভালে পড়ার রুটিন তৈরি করা আবশ্যক।
৬. মস্তিষ্ক সতেজ রাখতে রাতে পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে
একটি সুস্থ ও কার্যকরী মস্তিষ্ক পড়াশোনা ও ভালো রেজাল্ট করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত ৬-৮ ঘন্টা ঘুমালে মানুষের মস্তিষ্ক ভালো ও সতেজ থাকে। তাই আমাদের নিয়মিত অত্যন্ত ৭ ঘন্টা পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে। এতে আমাদের মস্তিষ্ক সহজে যেকোনো বিষয় বুঝতে পারবে ও মনে রাখতে পারবে। তাছাড়া শরীর ও মন সতেজ রাখতে নিয়মিত খেলাধুলা ও ব্যয়াম করতে হবে।
৭. সকালে পড়ার অভ্যাস করতে হবে
রিসার্স করে দেখা গেছে যে ঘুম থেকে উঠে সকাল বেলা পড়াশোনা করলে তা আমাদের মস্তিষ্ক সহজে গ্রহণ করতে পারে। রাতে একটি ভালো ঘুম হওয়ার পর সকালে আমাদের মস্তিষ্ক পুরোপুরি সতেজ থাকে। তখন যেকোন পড়া-লেখা অল্প সময়ে সহজে আত্মস্থ হয় ও দীর্ঘদিন মনে থাকে। তাই ভালো রেজাল্ট করতে চাইলে সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে কমপক্ষে ২-৩ ঘন্টা পড়াশোনায় বসার অভ্যাস করতে হবে। কম পড়ে ভালো রেজাল্ট করার এটি অন্যতম একটি নিঞ্জা টেকনিক।
৮. পরিক্ষার আগে থেকে সকল প্রকার ডিজিটাল ডিভাইস ও সোশিয়াল মিডিয়া থেকে দূরে থাকতে হবে
পড়াশোনায় গভীর মনোযোগ অত্যন্ত জরুরী। তাই পড়াশোনা করার সময় আমাদের সকল বাহ্যিক চিন্তা-ভাবনা ও আবেগ থেকে মুক্ত থাকতে হবে। ভালো রেজাল্ট করতে চাইলে পরিক্ষার অন্তত এক মাস আগে থেকে সকল প্রকার ডিজিটাল ডিভাইস (মোবাইল/ল্যাপটপ/কম্পিউটার/ক্যামেরা) ও ফেইসবুক সহ সব সোশিয়াল মিডিয়া থেকে দূরে থেকে তারপর প্রস্তুতি শুরু করতে হবে। এতে পড়াশুনার প্রতি একাগ্রতা বাড়বে। না হলে যত সময় ধরে পড়াশোনা করি না কেনো তা আসলে কোনো কাজে আসবে না।
৯. কিছুদিন অন্তর অন্তর আগের পড়াগুলো রিভিশন দিতে হবে
একটি পড়া শেষ হলে তা দীর্ঘদিন ফেলে রাখা ঠিক না। এতে তা আবার ভুলে যাবার সম্ভাবনা থাকে। তাই একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর পড়াগুলো রিভিশন দেয়া উচিৎ। যারা রিভিশন দেয় তারা অন্যদের চাইতে বেশি মনে রাখতে পারে এবং পরিক্ষায় অন্যদের চাইতে ভালো রেজাল্ট করে। তাই উচিৎ হবে আগের পড়াগুলো নিয়মিত নির্দিষ্ট সময় অন্তর পুনরায় রিভিশন দেওয়া। এর ফলে তা আমাদের স্মৃতিতে দীর্ঘদিন স্থায়ী হবে এবং মনে থাকবে।
১০. ভালো ছাত্রের সাথে বন্ধুত্ব করতে হবে ও সামনের আসনে বসতে হবে
সাধারনত সামনের আসনে ভালো শিক্ষার্থীরা বসে। তারা সামনের আসনে বসে যাতে স্যারের কথা স্পষ্ট শুনতে পায় । তাদের সাথে বন্ধুত্ব করলে ও সামনের আসনে বসলে তাদের চিন্তা-চেতনা ও ক্লাসের প্রতি মনোযোগ নিজের মধ্যেও চলে আসবে। পাশাপাশি যদি স্যারের কোন কথা না বুঝা যায় তাহলে সামনের আসন থেকে তাদের প্রশ্ন করার সুযোগ সহজ হয়। পেছনের আসনের বসলে তুমি সেই সুযোগ পাবে না। তাছাড়া ভালো শিক্ষার্থীরা কাছ থেকেও তুমি কোন পড়া না বুঝলে তাদের সহায়তা নিতে পারবে। কম পড়েও তাদের সহায়তায় তুমি বেশি জানতে পারবে।
2 thoughts on “কম পড়ে ভালো রেজাল্ট করার নিঞ্জা টেকনিক”