মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি

আমাদের ছায়াপথের নাম ‘মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি’ যেভাবে হলো

জানা অজানা নির্বাচিত পোস্ট মিথলজি
চাঁদহীন মেঘমুক্ত সন্ধ্যার আকাশের দিকে তাকালে আমরা আকাশের বুক চিরে উত্তর থেকে দক্ষিণে নক্ষত্রদের মধ্যে দিয়ে একটা ভাসমান পেঁজা তুলো বা আবছা সাদা মেঘের মত আলোর পটির অস্তিত্ব আমরা খুঁজে পাবো। ওটাই আমাদের ছায়া পথ, যাকে ইংরেজিতে ‘ মিল্কি ওয়ে ’ আর বাংলায় একে ‘আকাশ গঙ্গা’ নামে আমরা ডাকি।
আমাদের আবাসভূমি পৃথিবী নামক গ্রহটা এই মিল্কিওয়ে নামক বিশাল ছায়াপথের অন্তর্ভুক্ত ছোট্ট সৌরজগতের অতি ক্ষুদ্র একটি গ্রহ। আর সমগ্র সৌরজগত ছায়াপথ এর একটি ক্ষুদ্র অংশ। একাধিক গ্রহ নিয়ে যেমন সৌরজগত গড়ে ওঠে তেমনি অসংখ্য সৌরজগত মিলে গঠিত হয় ছায়াপথ। সাধারণত একটি ছায়াপথ আমাদের সুর্যের চেয়েও বড় বড় অসংখ্য তারকা, নক্ষত্র, নীহারিকা, সৌরজগত ও মহাজাগতিক বস্তুর সমন্বয়ে গড়ে ওঠে। একটি আদর্শ ছায়াপথে ১ কোটি থেকে এক লক্ষ কোটি তারকা থাকতে পারে।
ইংরেজিতে ছায়াপথ-কে বলা হয় Galaxy. আমাদের সৌরজগত Milky Way Galaxy তে অবস্থিত। মহাবিশ্বে এমন অগণিত Galaxy বা ছায়াপথ রয়েছে।

আমাদের ছায়াপথের নাম মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি যেভাবে হলো

গ্রিক পুরাণে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি তৈরির একটি চমৎকার গল্প আছে।
দেবরাজ জিউস রাজা এ্যাম্ফিট্রায়োনের পত্নী এ্যাল্ক্মেনের রূপে মুগ্ধ হয়ে সঙ্গোপনে তার সাথে মিলিত হন। এর ফলে এ্যাল্ক্মেনে গর্ভবতী হন। যথাসময়ে এ্যাল্ক্মেনে একটি পুত্র সন্তান প্রসব করেন এবং এই পুত্রের নাম রাখেন হেরাক্লেজ (রোমান নাম হার্কিউলিস)। এ্যাল্ক্মেনে তার এই সন্তানের অমঙ্গলের আশংকায় অস্থির হয়ে উঠেন। কারণ জিউসের স্ত্রী হেরা এই পুত্র সন্তানের কথা জানতে পারলে হেরাক্লেজ-এর ক্ষতি করার চেষ্টা করবেন। এই সে কারণে তিনি হেরাক্লেজ-এর জন্মের পরপরই তাকে উন্মুক্ত প্রান্তরে রেখে আসেন। কারণ, এ্যাল্ক্মেনের বিশ্বাস ছিল যে, জিউস তার সন্তানকে রক্ষা করবেন। ঘটনাক্রমে কিছুক্ষণ পর হেরা এবং এথেনা ওই প্রান্তর অতিক্রম করার সময় এই শিশুটিকে দেখতে পান। মাতৃস্নেহে হেরা এই শিশুটির স্তন্যদান করতে থাকেন। কিন্তু শিশু হেরাক্লেজ এতো জোরে স্তনপান করতে থাকেন যে, হেরা ব্যাথা পেয়ে বিরক্ত হয়ে এক জটকায় স্তন ফিরিয়ে নেন। এর ফলে কিছুটা দুধ ছিটকে বাইরে পড়ে। গ্রিক পৌরাণিক কাহিনীতে- বলা হয়, হেরার স্তন থেকে এই ছিটকে পড়া দুধের ক্ষীণ ধারা রাতের আকাশে ছড়িয়ে পড়ে আকাশে ‘দুধালো বৃত্তপথের’ এই ছায়াপথ তৈরি করেছে। দেবী হেরার বুকের দুধের প্রবাহ থেকেই ইংরেজি নাম “মিল্কি ওয়ে” এসেছে।

 

অন্যান্য মিথ

আর প্রাচীনকালে ভারতীয়রা মনে করত এটি স্বর্গের সিঁড়ি। স্কান্ডিনভিয়ান উপজাতিদেরও একই অভিমত ছিল। চীনারা ভেবেছিল এই নদীটা শ্রবণা ও অভিজিৎ এর মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে তাদের আলাদা করে দিয়েছে। মিশরীয়দেও ধারণা ছিল ওটি বোধহয় স্বর্গের নীল নদ। ভারতীয় পুরাণে একে বলা হয়েছে “আকাশ গঙ্গা”। এই গঙ্গাই স্বর্গ, অন্তরীক্ষ ও পৃথিবীর মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে

Sharing is caring!

Shajahan Manik

ইংরেজি প্রভাষক শাহ্জাহান মানিক একাধারে কবি, লেখক, গবেষক ও অনুবাদক। একাধিক কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও তার অনুদিত বইয়ের সংখ্যা ১০টি। এছাড়া সায়েন্স ফিকশন, সম্পাদনা, ছোটদের বইয়ের পাশাপাশি তার রয়েছে ইংরেজি শেখার বই। তার সর্বশেষ প্রকাশিত গ্রন্থ হচ্ছে- মানব কল্যাণে মুসলিম বিজ্ঞানীদের অবদান।

https://besorgo.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *