IELTS Exam and Score

IELTS পরীক্ষা পদ্ধতি এবং স্কোর যেভাবে হিসাব করা হয়!

জানা অজানা নির্বাচিত পোস্ট পাচমিশালী

IELTS পরীক্ষা পদ্ধতি এবং স্কোর যেভাবে হিসাব করা হয়!

বিদেশ গমনে ইংরেজি ভাষাভাষী দেশে যেতে চাইলে যোগ্যতা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে IELTS এর  বিকল্প নেই। বিভিন্ন দেশ ভিসা দেওয়ার সময় এই পরীক্ষার স্কোরের ওপর নির্ভর করে। আইইএলটিএস পরীক্ষার মাধ্যমে মূলত একজন ব্যক্তির নতুন দেশে মানিয়ে নেওয়ার এবং ক্যারিয়ার গড়ার মতো প্রয়োজনীয় ভাষা জ্ঞান আছে কিনা, তা যাচাই করা হয়। তাই বিদেশে পড়াশোনা বা ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন থাকলে আইইএলটিএস-এ ভালো ফল করা জরুরি। একারণে উন্নত জীবনযাপনের আশা, ভালো ক্যারিয়ার কিংবা স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নের ক্ষেত্রে সবাই এই সোনার হরিনের পেছনে ছুটে বেড়াচ্ছে।

🔹IELTS কি?

বিশ্বব্যাপী ইংরেজি দক্ষতা যাচাইয়ের স্বীকৃত একটি মাধ্যম হল IELTS- যার পূর্ণরুপ হল International English Language Testing System.
মূলত এটি একটি আন্তর্জাতিক মানের ইংরেজি দক্ষতা পরীক্ষার পদ্ধতি, যা প্রধানত নন-নেটিভ ইংলিশ ভাষাভাষীদের ইংরেজি ভাষাভাষী দেশগুলোতে পড়াশোনা, স্কলারশিপ, চাকরি এবং অভিবাসনের জন্য প্রয়োজন হয়। এটি ব্রিটিশ কাউন্সিল (British Council), আইডিপি: IELTS অস্ট্রেলিয়া (IDP: IELTS Australia) এবং কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস & অ্যাসেসমেন্ট (Cambridge University Press & Assessment) যৌথভাবে পরিচালনা করে। 
একজন আবেদনকারী কোন দেশে যাবে, কি ধরণের চাকরী করবে, উচ্চশিক্ষায় ভালো মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ অর্জনে এবং চাকরী পাওয়ার ক্ষেত্রে IELTS স্কোর প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। বিশ্বের ১৪০+ দেশে ১ লাখেরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয় ও নিয়োগকর্তা ১৯৮৯ সাল থেকে আইইএলটিএস (IELTS) পরীক্ষাকে ইংরেজি ভাষার দক্ষতা প্রমাণের নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এটি বিদেশে উচ্চশিক্ষা বা কাজের জন্য অপরিহার্য। 

 

IELTS হলো একটি সমন্বিত ইংরেজি দক্ষতা পরীক্ষা যা Listening, Reading, Writing এবং Speaking এই চারটি দক্ষতার উপর ভিত্তি করে নেয়া হয়। এটি বিদেশে পড়াশোনা, চাকরি, অভিবাসনসহ বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ইংরেজি দক্ষতার আন্তর্জাতিক প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। 

🔹 পরীক্ষার ধরণ

IELTS-এর দুটি প্রধান ধরণ আছে:
      • IELTS Academic
        উচ্চশিক্ষার জন্য (বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ) যারা বিদেশে যেতে ইচ্ছুক, তাঁদের একাডেমিক পরীক্ষা দিতে হয়।

         

      • IELTS General Training
        বিদেশে যারা চাকরি, প্রশিক্ষণ বা স্থায়ীভাবে বসবাস করতে চান তাদের জেনারেল পরীক্ষা দিতে হয়

🔹 পরীক্ষা ফরম্যাট (Test Format)

বিদেশে আবেদন করার জন্য IELTS স্কোর প্রয়োজন হলে, ভাষা দক্ষতার প্রমাণ দিতে চারটি জরুরি ধাপ/ অংশ পার হতে হবে।
ধাপগুলো হলো-
            • Listening, 
            • Reading, 
            • Writing, এবং 
            • Speaking
                                 পরীক্ষায় মোট সময় লাগে প্রায় ২ ঘন্টা ৪৫ মিনিট।
অংশ (Section)
সময় (Duration)
বিষয়বস্তু (Content)
Listening প্রায় ৩০ মিনিট ৪টি অডিও রেকর্ডিং শুনে প্রশ্নের উত্তর দিতে হয় (বিভিন্ন উচ্চারণে ইংরেজি)। এতে দুইজন ব্যক্তির মধ্যে কথোপথনের ধরণ, উক্তি বা নাটকের সংলাপ, কথোপকথনের ধরণ, লেকচার, ইত্যাদি থাকে। 
Reading ৬০ মিনিট ৩টি প্যাসেজ থেকে প্রশ্নের (৪০ টি প্রশ্ন)  উত্তর দিতে হয়। Academic ও General Training-এর Reading অংশ আলাদা। 
Writing ৬০ মিনিট ২টি টাস্ক:

• Task 1: Academic-এ চার্ট/গ্রাফ/চিত্র বিশ্লেষণ, General-এ চিঠি লেখা।                                                                        • Task 2: যেকোনো বিষয় নিয়ে একটি অনুচ্ছেদ / প্রবন্ধ লেখা।

Speaking ১১–১৪ মিনিট পরীক্ষকের সাথে সরাসরি মৌখিক সাক্ষাৎকার। এতে ৩টি ধাপ থাকে : পরিচিতি, টপিক নিয়ে আলোচনা, এবং গভীরতর প্রশ্নোত্তর (ইন্টারভিউ, সংলাপ, ডিসকাশন)। 

🔹 IELTS ব্যান্ড স্কোর (Band Score)

  • IELTS এ কোনো পাশ নাম্বার নেই। তার বদলে দেয়া হয় ব্যান্ড স্কোর। আপনি কত নাম্বার পেয়েছেন তার উপর ভিত্তি করে ১-৯ এর মাঝে আপনাকে একটি স্কোর দেয়া হবে। আপনি সর্বনিন্ম স্কোর ০.৫ পেতে পারেন, ঠিক যেমন ৬.৫ বা ৭.৫ পেতে পারেন।

     

  • আপনি চারটি বিভাগে (লিসিনিং, রিডিং, রাইটিং, স্পিকিং) এ ১-৯ পর্যন্ত স্কোর অর্জন করতে পারবেন।  প্রতিটি অংশে আলাদা ব্যান্ড দেওয়া হয়, তারপর চারটির গড় হিসেব করে Overall Band Score নির্ধারণ করা হয়।


    🔹অভারঅল ব্যান্ড হিসাব যেভাবে করা হয় 

IELTS-এ নয়টি ব্যান্ডের স্কেলে স্কোর করা হয়, প্রতিটি ব্যান্ড ইংরেজিতে একটি নির্দিষ্ট দক্ষতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। সামগ্রিক ব্যান্ড স্কোর নিকটতম অর্ধেক ব্যান্ডকে রিপোর্ট করা হয়। এই গড় স্কোরটি যদি .২৫ বা .৭৫ এর কোনো সংখ্যা হয়, তাহলে এটিকে উপরের .৫ বা .০০ ব্যান্ডে নিয়ে যাওয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ:
১. যদি কারো ওভারঅল ব্যান্ড স্কোর ৭.২৫ হয়, তাহলে তার স্কোরকে ৭.৫ করে দেওয়া হয়
২. তেমনি যদি ওভারঅল ব্যান্ড স্কোর ৭.৭৫ হয়, তাহলে তার স্কোরকে ৮ করে দেওয়া হয়
৩. অপরদিকে যদি ওভারঅল ব্যান্ড স্কোর ৭.১ হয়, তাহলে স্কোর টাকে ৭ এ নামিয়ে দেওয়া হবে।
৪. অর্থাৎ, আপনার স্কোর-কে রাউন্ড ফিগারে করে দিবে, আপনার স্কোরটা পয়েন্ট ৫ অথবা একটা পূর্ণ সংখ্যা হতে বাড়ালে অথবা কমালে যেদিক থেকে কাছে হয় সেটা করে দেওয়া হয়

নয়টি ব্যান্ডের বর্ণনা নিম্নরূপ:  

ব্যান্ড

দক্ষতা

বিবরণ

বিশেষজ্ঞ ভাষার উপর পূর্ণ কার্যকরী দখল আছে: উপযুক্ত, নির্ভুল এবং সাবলীল, সম্পূর্ণ বোধগম্যতা সহ। ব্যক্তির ইংরেজি ভাষার উপর পূর্ণ কার্যকরী দখল আছে। তাদের ইংরেজি ব্যবহার উপযুক্ত, নির্ভুল, সাবলীল এবং সম্পূর্ণ বোধগম্যতা দেখায়।
খুব ভালো ভাষার উপর সম্পূর্ণরূপে দক্ষ, মাঝে মাঝে অপ্রচলিত ভুলত্রুটি থাকলেও। অপরিচিত পরিস্থিতিতে ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে। জটিল বিস্তারিত যুক্তি ভালোভাবে পরিচালনা করে।
ভালো ভাষার উপর কার্যকরী দখল আছে, যদিও মাঝে মাঝে ভুল, অনুপযুক্ততা এবং কিছু পরিস্থিতিতে ভুল বোঝাবুঝি দেখা দেয়। সাধারণত জটিল ভাষা ভালোভাবে পরিচালনা করে এবং বিস্তারিত যুক্তি বোঝে।
দক্ষ কিছু ভুল বা ভুল বোঝাবুঝি সত্ত্বেও, ভাষার উপর তার কার্যকর দখল রয়েছে। বেশ জটিল ভাষা ব্যবহার করতে এবং বুঝতে পারে, বিশেষ করে পরিচিত পরিস্থিতিতে।
বিনয়ী ভাষার উপর আংশিক দখল আছে, বেশিরভাগ পরিস্থিতিতে সামগ্রিক অর্থের সাথে মানিয়ে নিতে পারে, যদিও অনেক ভুল করার সম্ভাবনা থাকে। নিজস্ব ক্ষেত্রে মৌলিক যোগাযোগ পরিচালনা করতে সক্ষম হতে হবে।
সীমিত মৌলিক দক্ষতা পরিচিত পরিস্থিতিতে সীমাবদ্ধ। বোঝার এবং প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রায়শই সমস্যা হয়। জটিল ভাষা ব্যবহার করতে অক্ষম।
অত্যন্ত সীমিত খুব পরিচিত পরিস্থিতিতে কেবল সাধারণ অর্থ প্রকাশ করে এবং বোঝে। যোগাযোগে ঘন ঘন বিঘ্ন ঘটে।
মাঝেমধ্যে পরিচিত পরিস্থিতিতে এবং তাৎক্ষণিক চাহিদা মেটাতে বিচ্ছিন্ন শব্দ বা ছোট সূত্র ব্যবহার করে সবচেয়ে মৌলিক তথ্য ছাড়া কোনও বাস্তব যোগাযোগ সম্ভব নয়। কথ্য এবং লিখিত ইংরেজি বুঝতে খুব অসুবিধা হয়।
অক্ষম সম্ভবত কয়েকটি বিচ্ছিন্ন শব্দের বাইরে ভাষা ব্যবহারের ক্ষমতা তার নেই।
0 চেষ্টা নয় কোনও মূল্যায়নযোগ্য তথ্য মোটেও সরবরাহ করা হয়নি।

                                              Source: https://en.wikipedia.org/wiki/International_English_Language_Testing_System

🔹IELTS-এ  মিনিমাম কতো স্কোর থাকা ভালো? 

আইইএলটিএস ওয়েবসাইট অনুযায়ী, আপনি যে পরীক্ষা দেবেন তার ওপর ভিত্তি করে একটি সামগ্রিক স্কোর পাবেন। পাস বা ফেল বলে কিছু নেই। এই স্কোর ০ থেকে ৯ পর্যন্ত হতে পারে। তবে আপনার আইইএলটিএস দেওয়ার একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য আছে, তা হতে পারে উচ্চশিক্ষা বা বিদেশে চাকরি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একটি নির্দিষ্ট স্কোর চায়। সেই স্কোর পেলেই আপনাকে সেখানে ভর্তি হতে হবে। স্কোর যত বেশি হবে স্কলারশিপ পাওয়ার সম্ভাবনাও তত বেশি হবে। এই স্কোর দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে ভিন্ন হয়। সাধারত: বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বা অভিবাসনের জন্য ৬.০–৭.৫ ব্যান্ড স্কোর ভালো ধরা হয়। ৬ এর নিচে স্কোর পেলে ভালো কোন দেশে ভর্তি হওয়া কঠিন। তাই আপনি কোন দেশে বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চান, তাদের চাহিদা অনুযায়ী লক্ষ্য ঠিক করে প্রস্তুতি নিন।

🔹কতদিনের জন্য IELTS স্কোর বৈধ থাকে

আইএলটিএস (IELTS) পরীক্ষার ফলাফলের সাধারণত মেয়াদ ২ বছর বা ২৪ মাস। অর্থাৎ, যে তারিখে পরীক্ষা দেয়া হয়েছে, সেই তারিখ থেকে ২ বছর পর্যন্ত IELTS স্কোর সরকারিভাবে গ্রহণযোগ্য হয়। এই সময়ের মধ্যেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা ভিসার জন্য আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে, অন্যথায় নতুন করে পরীক্ষা দিতে হতে পারে।

🔹IELTS পরীক্ষা কতোবার দেয়া যায়

আইইএলটিএস পরীক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের বাধ্যবাধকতা নেই। এই পরীক্ষা দেওয়ার জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা বা নিয়ম নেই যে অনুসরণ করতেই হবে। এখানে বয়সেরও নেই কোনো বাধ্যবাধকতা। তবে সাধারণত প্রার্থীকে ১৬ বছর কিংবা তার বেশি হওয়া প্রয়োজন। আপনি যখন নিজেকে প্রস্তুত মনে করবেন, তখনই এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন। তবে, সাধারণত একটি ভালো স্কোর অর্জন করার জন্য কিছু প্রস্তুতি নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। পরীক্ষার পূর্বে যথাযথ প্রস্তুতি নিলে আপনার ভালো ফল করার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। তাই, পরীক্ষা দেওয়ার আগে নিজের দক্ষতা যাচাই করে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করাই শ্রেয়।

🔰 শেষকথা

আইইএলটিএস শুধু একটি পরীক্ষা নয়, এটি ইংরেজি দক্ষতা যাচাইয়ের একটি প্রায়োগিক পদ্ধতি। ভালো স্কোর করতে নিয়মিত অনুশীলন, সময় ব্যবস্থাপনা, ধৈর্য এবং সঠিক কৌশল প্রয়োজন। এই পরীক্ষায় চারটি অংশর প্রতিটিতে ভালো করার জন্য আলাদা আলাদা কৌশল অবলম্বন করতে হয়। এছাড়া, ইংরেজি ভাষার উপর দখল বাড়াতে নিয়মিত ইংরেজি বই পড়া, সিনেমা দেখা এবং ইংরেজি মাধ্যমে কথা বলার অভ্যাস করতে হবে।                                 

Sharing is caring!

Shajahan Manik

ইংরেজি প্রভাষক শাহ্জাহান মানিক একাধারে কবি, লেখক, গবেষক ও অনুবাদক। একাধিক কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও তার অনুদিত বইয়ের সংখ্যা ১০টি। এছাড়া সায়েন্স ফিকশন, সম্পাদনা, ছোটদের বইয়ের পাশাপাশি তার রয়েছে ইংরেজি শেখার বই। তার সর্বশেষ প্রকাশিত গ্রন্থ হচ্ছে- মানব কল্যাণে মুসলিম বিজ্ঞানীদের অবদান।

https://besorgo.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *