কথোপকথন–১১
–পুর্ণেন্দু পত্রী
– তুমি আজকাল বড্ড সিগারেট খাচ্ছ শুভঙ্কর।
– এখুনি ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছি।
কিন্তু তার বদলে?
– বড্ড হ্যাংলা। যেন খাওনি কখনো ?
– খেয়েছি।
কিন্তু আমার খিদের কাছে সে সব নস্যি।
কিন্তু কলকাতাকে এক খাবলায় চিবিয়ে খেতে পারি আমি।
আকাশটাকে ওমলেটের মত চিরে চিরে
নক্ষত্রগুলোকে চিনেবাদামের মত টুকটাক করে
পাহাড়গুলোকে পাঁপড় ভাজার মত মড়মড়িয়ে
আর গঙ্গা ?
সেতো এক গ্লাস সরবত।
– থাক খুব বীরপুরুষ।
– সত্যি তাই।
পৃথিবীর কাছে আমি এইরকম ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ।
কেবল তোমার কাছে এলেই দুধের বালক
কেবল তোমার কাছে এলেই ফুটপাতের নুলো ভিখারী
এক পয়সা, আধ পয়সা কিংবা এক টুকরা পাউরুটির বেশি
আর কিছু ছিনিয়ে নিতে পারি না।
– মিথ্যুক।
– কেন ?
– সেদিন আমার সর্বাঙ্গের শাড়ি ধরে টান মারনি ?
– হতে পারে।
ভিখারীদেরর কি ডাকাত হতে ইচ্ছে করে না একদিনও ?
কবি পরিচিতি:
কবি পূর্ণেন্দু পত্রী (ফেব্রুয়ারি ২, ১৯৩১ – মার্চ ১৯, ১৯৯৭)ছিলেন বিশিষ্ট বাঙালি কবি, কথাসাহিত্যিক, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও অনুবাদক। তাঁর আসল নাম ছিল পূর্ণেন্দু দাসগুপ্ত। ষাটের দশকে তিনি বাংলার আধুনিক কবিতার ধারায় একটি স্বতন্ত্র কণ্ঠস্বর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ভাষার নতুনত্ব, চিত্রকল্পের অভিনব ব্যবহার ও তীক্ষ্ণ ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গি তাঁর কবিতাকে সমকালীনদের মধ্যে স্বতন্ত্র আসন দিয়েছে। এই ভারতীয় বাঙালি কবি কেবল কবিতাতেই সীমাবদ্ধ ছিলেন না; তিনি ছোটগল্প ও উপন্যাসেও উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। পাশাপাশি তিনি চলচ্চিত্র জগতেও যুক্ত ছিলেন।
তাঁর উল্লেখযোগ্য কবিতাগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে অর্ধেক নামপত্রে, মৃত্যুর আগে, শীতের একদিন, প্রভৃতি। তিনি জীবনানন্দ-পরবর্তী বাংলা কবিতার ধারা থেকে ভিন্ন এক দিক উন্মোচন করেছিলেন, যেখানে শহরের জীবনযাত্রা, বেদনা ও বিচ্ছিন্নতা এক নতুন রূপে প্রতিফলিত হয়েছে।
Very romantic poem